পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। রামপুরহাট ২ ব্লকের অধীনে মাড়গ্রাম থানার খাপুর গ্রামের ঘটনা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম মানাবালি মাল (৬০)। খাপুর গ্রামের মালপাড়ার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে মারা যান।
রামপুরহাট ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী জানান, খাপুর গ্রামের মালপাড়ায় পুকুরের দূষিত জল ব্যবহার করার জন্য গত ২৯ জানুয়ারি থেকে গ্রামে পেটের রোগ দেখা দিয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি গ্রামে প্রথমে ৩ জন আক্রান্ত হন। পরবর্তীকালে এক-দুই করে ৭ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার পর্যন্ত মোট ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন এখন বশোয়ায় ব্লক স্বাস্থ্য প্রাথমিক কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছরের এক জন শিশুও রয়েছে। বর্তমানে ওই শিশুটি সুস্থ আছে বলে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জন মহিলা ও ৭ জন পুরুষ রয়েছেন। এঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মানাবালি মাল প্রথমে বশোয়ায় রামপুরহাট ২ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার ওইবৃদ্ধাকে ছুটি দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে থাকাকালীন ওই বৃদ্ধা মারা যান।
অভিজিৎ রায়চৌধুরী জানান, বৃদ্ধা পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। দুর্বলতার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মানাবালি মালের এক আত্মীয় নিতাই মাল বলেন, “যদি হাসপাতাল ওঁকে আরও কয়েকদিন রাখত, তা হলে হয় তো ওঁকে এ ভাবে মারা যেতে হত না।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খাপুর গ্রামে ২৯ জানুয়ারি পেটের রোগে মালপাড়ার ৩ জন পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কর্মীরা সেইদিন থেকেই গ্রামে পুকুরের দূষিত জল ব্যবহার না করার জন্য সচেতন করতে শুরু করেন। গ্রামে এখন একটি কমিউনিটি সাবমার্সিবল পাম্প আছে সেখান থেকে গ্রামবাসীরা পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। গ্রামে ১০টি সরকারি নলকূপের জল পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই জলে কোনও রকম পেটের রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান। একমাত্র মালপাড়ার পুকুরের জলে পেটের রোগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। গ্রামে স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ট্যাবলেট, ওআরএস সরবরাহ করেছেন। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে গ্রামে ব্লিচিং ছড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েতের প্রধান রোশনেয়ারা বেগমের স্বামী ভুটু শেখ বলেন, “গ্রামে প্রথম দিন থেকেই আমরা পুকুরের দূষিত জল ব্যবহার না করার জন্য গ্রামবাসীদের সচেতন করে আসছি। স্বাস্থ্য দফতর এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে আক্রান্তদের চিকিৎসার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
রামপুরহাট ২ বিডিও অর্ক দত্ত বলেন, “খাপুর গ্রামে আর যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় তার জন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)