বমাল: গ্রেফতার হওয়া দু’জন। নিজস্ব চিত্র
নিজের বন্দুকের দোকান ছিল। বেআইনি কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে পুরুলিয়া শহরের সেই দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর আগে। তবে অবৈধ পথে কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন পুরুলিয়া শহরের স্টেশনপাড়ার চণ্ডীচরণ কর্মকার। রবিবার বাঁকুড়া থেকে গাড়িতে আসার পথে, পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তায় কেন্দা গ্রামের কাছে দোনলা বন্দুক-সহ তাকে গ্রেফতার করল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
এসটিএফের আইজি অজয় নন্দ বলেন, ‘‘চণ্ডীচরণ কর্মকার নামের ওই ব্যক্তি আন্তঃরাজ্য অস্ত্র পাচার চক্রের অন্যতম পাণ্ডা। অবৈধ ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ভুয়ো লাইসেন্স বানিয়ে সেগুলি বিহার ও অন্য জায়গায় দুষ্কৃতীদের কাছে বিক্রি করত। আমাদের নজর ছিল ওর উপরে। এ দিন অভিযান চালিয়ে ধরা হয়েছে।” চণ্ডীচরণের সঙ্গে এ দিন ওই গাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মথুর পাসোয়ান নামে পুরুলিয়া টাউন থানারই আমডিহাপাড়ার এক জনকেও। তিনি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলে এসটিএফ সূত্রের খবর।
রবিবার বাঁকুড়া থেকে বন্দুক নিয়ে গাড়িতে করে চণ্ডীচরণ ফিরবে বলে আগে থেকে খবর ছিল এসটিএফ-এর কাছে। সেই সূত্রেই অভিযান হয় কেন্দা থানা এলাকায়। এসটিএফের ডিএসপি অর্ক পাঁজার নেতৃত্বে অভিযানে ছিলেন ইনস্পেক্টর সত্যব্রত দত্ত এবং এসটিএফ ও কেন্দা থানার পুলিশকর্মীরা। সূত্রের খবর, ওই দু’জনকে ধরার পরে এসটিএফ তুলে দিয়েছে কেন্দা থানার হাতে। আজ, সোমবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
নিজের বন্দুকের ব্যবসা থাকার সময়েই একাধিক বার চণ্ডীচরণের বিরুদ্ধে অবৈধ কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার বিরুদ্ধে দুর্গাপুর, কুলটি, ডানকুনি, পুরুলিয়া টাউন ও সাঁওতালডিহি থানায় অস্ত্রআইন ও অন্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু ছাড়া পেয়ে ফের অবৈধ অস্ত্রের কারবারে চণ্ডীচরণ নেমে পড়েছে বলে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল এসটিএফের কাছে।
কী ভাবে চলত কারবার? পুলিশের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এমন অনেকের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে যাঁরা এখন আর অস্ত্রগুলি ব্যবহার করেন না। মৃত্যু হয়েছে কোনও কোনও লাইসেন্সধারীর। কেউ অথর্ব হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে সেই খবর জোগাড় করত চণ্ডীচরণ। তার পরে যোগাযোগ করত সেই পরিবারগুলির সঙ্গে। নগদ টাকায় অস্ত্রগুলি কিনে, মেরামত করে বিক্রি করত ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীদের কাছে। পুলিশের দাবি, রবিবার বাঁকুড়া থেকে আনা দোনলা বন্দুকটি বিহারের এক জনকে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল চণ্ডীচরণের। সূত্রের খবর, এসটিএফ জানতে পেরেছে ওই দোনলা বন্দুকটি লালগড় থানা এলাকার কারও থেকে জোগাড় করেছিল সে। ওই থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এসটিএফ।
তদন্তে নেমে এসটিএফ জানতে পেরেছিল, সংগ্রহ করার পরে দোনলা বন্দুকগুলিকে (ডাবল ব্যারেল ব্রিচ লোডিং গান) তিন ভাগে ভাগ করে পাচার করত চণ্ডীচরণ। পুরনো মডেলের ওই দোনলা বন্দুকগুলি সহজেই ব্যারেল, ট্রিগারের এলাকা ও বাঁট— এই তিন ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায়। একটি দোনলা বন্দুক ফুট তিনেকের হয়। ভাগ করলে এক ফুট জায়গাতেই এঁটে যায়। এ দিন গাড়ির পিছনের আসনের নীচে সে ভাবেই ভাগ ভাগ করে রাখা ছিল বন্দুকটি।
এসটিএফ ও পুলিশের দাবি, বন্দুক উদ্ধারের পরে সেই সম্পর্কিত বৈধ নথি চাওয়া হয়েছিল চণ্ডীচরণ ও মথুরের কাছে। কোনও নথিই তারা দিতে পারেনি বলে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। তবে ধৃতদের দাবি, তাদের ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy