Advertisement
E-Paper

ভোটার-আধার-প্যান কার্ডের পরেও নাগরিকত্ব সংশয়ে, তাই এসআইআর প্রক্রিয়ায় অনীহা, দাবি আদিম নাগরিকেদের সরকার একটাই ‘অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি’!

গ্রেফতার দুই ‘মাথা’। ধৃতদের এক জন বাঁকুড়ার বারিকুলের বাসিন্দা। অপর জনের বাড়ি পড়শি রাজ্য ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও এসআই প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ময়দানে নেমেছে একাধিক আদিবাসী সংগঠন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৩:১৫

—প্রতীকী চিত্র।

আদিবাসী সম্প্রদায়কে ভুল বুঝিয়ে এসআইআর-এর ফর্ম ভর্তি না করার জন্য প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বোঝানো হচ্ছে দেশের আদি নাগরিকেদের একটাই সরকার, ‘‘অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার।’’ এই সদস্যপদ গ্রহণ করলে এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার দরকার নেই। নেপথ্যের কারণ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে প্রতারণা চক্রের হদিশ পেল বাঁকুড়ার বারিকুল থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার দুই ‘মাথা’। ধৃতদের এক জন বাঁকুড়ার বারিকুলের বাসিন্দা। অপর জনের বাড়ি পড়শি রাজ্য ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে। এই পরিস্থিতিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও এসআই প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ময়দানে নেমেছে একাধিক আদিবাসী সংগঠন।

এসআইআর ফর্ম পূরণ না করে মাঝি সরকারের সদস্য পদ নেওয়ার জন্য লাগাতার প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার একাধিক ব্যক্তি। সেই প্ররোচনায় পা দিয়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভার একাধিক গ্রামের আদিবাসী মানুষ এসআইআর ফর্ম পূরণ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এসআই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। সরকারি আধিকারিকেরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভ দেখানো হয় তাঁদেরকে ঘিরেও। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ ও বাঁকুড়ার বারিকুল থানা এলাকা থেকে দুই ‘পাণ্ডা’কে গ্রেফতার করে বাঁকুড়ার বারিকুল থানার পুলিশ ।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ‘মাঝি সরকার’ ছত্তিশগড় থেকে পরিচালিত হলেও এ রাজ্যে তার শাখা বিস্তারে মূল ভূমিকা রয়েছে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ এলাকার একাধিক ব্যক্তির। তদন্তে জানা যায়, মাঝি সরকারের সদস্যপদ নিলে নাগরিকত্ব ছাড়াও দেশের সব জায়গায় বিনা ভাড়ায় যাতায়াত- সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে মাথাপিছু ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘সদস্যপদ’ দিয়ে প্রতারণা করা হয়। ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের একাংশ ইতিমধ্যেই প্রতারিত হয়েছে।

প্রতারণার ‘পাণ্ডা’দের ধরতে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পূর্ণিয়া গ্রামে হানা দেয় বারিকুল থানার পুলিশ । ওড়িশা পুলিশের সহায়তায় প্রতারণা চক্রের অন্যতম মাথা ভবেন্দ্র মারাণ্ডি নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে বাঁকুড়া নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রে জড়িত বাঁকুড়ার বারিকুল থানার রসপাল গ্রামের বাসিন্দা তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রাক্তন নেতা সন্তোষ মাণ্ডির খোঁজ পেয়ে পুলিশ তাঁকেও গ্রেফতার করে । দু’জনের বিরুদ্ধেই আর্থিক প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ধৃতদের খাতড়া মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারকের নির্দেশে তাঁদের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।

প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে একাধিক আদিবাসী সামাজিক সংগঠন। প্রতারণার শিকার না হয়ে প্রত্যেক নাগরিকের কেন এসআইআর এর গননা ফর্ম পূরণ করা আবশ্যক সে বিষয়ে সচেতনতা গড়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সংগঠনগুলি আশাবাদী এবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভা এলাকার আদিবাসীরা এসআইআরের গননা ফর্ম পূরণে অংশ নেবেন।

এই প্রসঙ্গে আদিবাসী সংগঠনের নেতা তথা স্থানীয় শিক্ষক মিলন মাণ্ডি বলেন, ‘‘মাঝি সরকার বা অন্য কোনও সংগঠনের প্ররোচনায় সহজ সরল আদিবাসীরা এসআইআরের গননা ফর্ম পূরণে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ভুল করছেন। এস আই আরের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী দিনে বিপদে পড়তে হতে পারে ওই মানুষগুলিকে। আমরা চাইব প্রশাসন ওই এলাকায় গিয়ে মানুষকে সঠিক বিষয়টি বুঝিয়ে তাঁদের এসআইআর ফর্ম পূরণে সহযোগিতা করুক।’’ অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুনীল কুমার মাণ্ডি বলেন, ‘‘মাঝি সরকারের নামে এ ভাবে সহজ সরল আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে শুধু আর্থিক প্রতারণা করা হচ্ছে তাই নয়, আগামী দিনে তাঁদের নাগরিকের অধিকার থেকেও দূরে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে। আশা করি ওই মানুষগুলি নিজেদের ভুল বুঝে যত দ্রুত সম্ভব এসআইআর ফর্ম পূরণ করে জমা দেবেন।’’

Citizenship police investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy