সরকারি ভাবে ধান কেনার নিরিখে নতুন রেকর্ডের মুখে দাঁড়িয়ে বাঁকুড়া জেলা। উপকৃত চাষির সংখ্যাও গত বারের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। ধানের ভাল ফলন ও শিবিরের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এই সাফল্য বলে দাবি প্রশাসনের। যদিও জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তা মানতে নারাজ বিরোধীরা।
খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার পর্যন্ত জেলা জুড়ে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৫৩ টন ধান কেনা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত সরকারি ভাবে সর্বোচ্চ ধান কেনা হয়েছিল ২০২২-২৩ খরিফ মরসুমে। পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৩০৮ টন। ধান কেনার গতির নিরিখে আগামী কয়েক দিনে সেই পরিমাণ পেরিয়ে যাবে বলে দাবি দফতরের কর্তাদের। পাশাপাশি, এ পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৮৮২ জন চাষি সরকারি জায়গায় ধান বিক্রি করেছেন। গত বছরে তা ছিল ৩ হাজার ২৯ জন।
জেলায় এ বছরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লক্ষ ৯২ হাজার টন। ধান কেনার গতি ভাল হওয়ায় মাঝপথে রাজ্য লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ায় কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সেখ আলিমুদ্দিন জানান, এ বারে ফলন ভাল হওয়ায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রাও বেশি ছিল। সমস্ত স্তরের মানুষ যাতে সরকারি শিবিরে ধান বিক্রির সুযোগ পান, তার জন্য শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এ বছরে জেলায় ৪১টি শিবির করা হয়েছিল। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ শিবির ছিল সাতটি। তিনি বলেন, “ভাল ফলন, বেশি শিবির ও সরকারি জায়গায় ধান বিক্রি নিয়ে সর্বস্তরে প্রচারেই ভাল সাড়া মিলেছে।”
তবে দফতরের দেওয়া তথ্যকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন সারা ভারত কৃষকসভার বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায়। তাঁর দাবি, “খাদ্য দফতর যে তথ্য দিচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ সব কাগজে-কলমেই মানায়। বাস্তবের মাটিতে নামলে বোঝা যাবে, চাষিরা কতটা বঞ্চিত হয়েছেন।” তাঁর সংযোজন, সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হওয়ার আগেই চাষিরা বাইরে বিক্রি করেছেন। সরকারি শিবিরে ঝাড়াই-বাছাইয়ের নামে ধান বাদ দেওয়া, রেজিস্ট্রেশনে হয়রানি, ধান্যক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত ধান বয়ে নিয়ে যেতে বাড়তি খরচের মতো নানা অসুবিধায় কিছুটা কম দামে হলেও আড়তে ধান বিক্রিতে স্বচ্ছন্দ চাষিরা। এ বারেও তাই হয়েছে।
শুক্রবারই খাতড়ার কেচন্দায় ধান্যক্রয় কেন্দ্রের সামনে ধান ছড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, ঝাড়াই-বাছাইয়ের নামে কুইন্ট্যালপিছু ১০ কেজি ধান বাদ দেওয়া হচ্ছে সরকারি শিবিরে। যদিও এ বারে শিবিরে ধান বিক্রিতে সমস্যায় পড়ার অভিযোগ কম উঠেছে বলে দাবি দফতরের। জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “অন্য বারের তুলনায় এ বারে চাষিদের তরফে কম অভিযোগ উঠেছে। যে সব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলির যথাযথ তদন্ত
করে দেখা হচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)