Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
Bishnupur

Bishnupur: প্রথম তেরঙ্গা, এ বার কি স্বাদ উন্নয়নেরও

বিষ্ণুপুর মহকুমা সদর থেকে কমবেশি ১০ কিলোমিটার দূরে বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের কানগড় গ্রাম এখনও উন্নয়নের পথ অপেক্ষায়।

বিষ্ণুপুর মহকুমা সদর থেকে কমবেশি ১০ কিলোমিটার দূরে বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের কানগড় গ্রাম এখনও উন্নয়নের পথ অপেক্ষায়।

বিষ্ণুপুর মহকুমা সদর থেকে কমবেশি ১০ কিলোমিটার দূরে বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের কানগড় গ্রাম এখনও উন্নয়নের পথ অপেক্ষায়।

অভিজিৎ অধিকারী
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৯:১০
Share: Save:

গ্রামের পাশ দিয়ে জঙ্গল ফুঁড়ে গিয়েছে রেললাইন। পাশেই বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপ। ট্রেনের ঝিক ঝিক আওয়াজ শুনে মুচকি হেসে বৃদ্ধ শিবু কিস্কু বললেন, ‘‘কাছেই রেললাইন। একসময়ে হাওয়াই জাহাজও নামত। কিন্তু এত দিনেও ভাল রাস্তা নেই। বিদ্যুৎ এসেছে, কিন্তু ভাঙা ঘর। সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ গেলে নির্জলাথাকতে হয়।’’

বিষ্ণুপুর মহকুমা সদর থেকে কমবেশি ১০ কিলোমিটার দূরে বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের কানগড় গ্রাম এখনও উন্নয়নের পথ অপেক্ষায়।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে সোমবারই প্রথম এই আদিবাসী গ্রামে তেরঙ্গা উড়েছে। সে সুবাদেই চর্চার কেন্দ্রে কানগড়। ২৩টি ঘরে প্রায় শ’খানেকের বাস। সব বাড়িই মাটির। কোনওটির চালা খড়ের, কোনওটির অ্যাসবেসটস, কোথাও আবার ত্রিপল টাঙানো। অধিকাংশ বাসিন্দার জমিজমা বলতে কিছু নেই। অল্প কয়েকজন পাট্টা পেলেও সেচের অভাবে চাষবাস প্রায় নেই। হয় দিনমজুরি, তা না জুটলে জঙ্গলে কাঠ-পাতা কুড়িয়ে বেচে পেট চালাতে হয়।

সবুজসাথীর সাইকেল নিয়ে বিষ্ণুপুরের শিবদাস সেন্ট্রাল বালিকা বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল দশম শ্রেণির অঞ্জলি মুর্মু, একাদশের সায়ন্তি মান্ডি, মিশন বয়েজ়ে যাচ্ছিল ইন্দ্রজিৎ কিস্কু। সকলেই বলে, ‘‘সাইকেলের চাকা কয়েক পাক ঘুরলেই পাড়ার ঢালাই রাস্তাটা শেষ। তারপর তিন-চার কিলোমিটার এবড়ো-খেবড়ো সরু মাটির রাস্তা ধরে শিরোমণিপুর পর্যন্ত যেতে হয়। সেখান থেকে মোরাম রাস্তা পাওয়া গেলেও, জঙ্গলের পথে ভয়ে ভয়ে যেতে হয়।’’

দুর্গা মান্ডি, সুনীল সরেন জানান, তাঁদের গ্রামে প্রাথমিক স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়িও নেই। তিন কিলোমিটার দূরে পানশিউলিতে প্রাথমিক স্কুলে যায় গ্রামের জনা দশেক পড়ুয়া। পাঁচটি শিশু যায় শিরোমণিপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। গ্রামের বধূ আদরি মুর্মু, মমতা সরেনরা বলেন, ‘‘কাছাকাছি ছোটখাট স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। অ্যাম্বুল্যান্স শিরোমণিপুরের পরে আসতে পারে না। কারও প্রসব বেদনা উঠলে ডুলিতে বা মোটরবাইকে চাপিয়ে বিষ্ণুপুরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।’’

প্রবীণ বাসিন্দা রাধামণি মুর্মু, ফেলু কিস্কু বলেন, ‘‘শুনেছি, আদিবাসীদের জন্য কত প্রকল্প সরকার চালু করেছে। কিন্তু দুর্গম হওয়ায় দুয়ারে সরকারের শিবির আমাদের গ্রামে হয়নি। পানশিউলির শিবিরে বয়স্করা অনেকেই যেতে পারেনি।’’ ফলে কেউ কেউ লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, তফসিলি জাতির শংসাপত্র, পেনশন প্রকল্পের সুবিধা পেলেও সবাই তা পাননি বলে অভিযোগ। শৌচাগার হয়নি। জোটেনি আবাস যোজনার ঘরও। প্রবীণ দুর্গা মুর্মুর আক্ষেপ, ‘‘তিন বার হাতির হানা ও একবার ঝড়-বৃষ্টিতে পুরনো মাটির বাড়িটা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বাধ্য হয়ে পাশের একটি ঘরেই দুই ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী বাস করি।’’ তিনি জানান, ভোটের সময় গ্রামে নেতারা আসেন। পরে তাঁদের দেখা মেলে না।

গ্রামে পতাকা তোলার খবর চাউর হতেই বুধবার স্থানীয় পঞ্চায়েতের কর্মীরা এসে শৌচাগার করতে গ্রামবাসীর থেকে আধারকার্ডের প্রতিলিপি নিয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের কৃষ্ণা সর্দারের আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই ওই গ্রামে ঘরে ঘরে শৌচালয় হবে। আবাস প্লাস প্রকল্পে গ্রামের সবার নাম রয়েছে। অনুমোদন এলেই ঘর করা হবে।’’

কিন্তু এত দিনেও হয়নি কেন? বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছতে অনীহা দেখাচ্ছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষের দাবি, ‘‘শুধু কানগড় নয়, এ চিত্র রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায়।’’ যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রাজু পালের স্বীকারোক্তি, ‘‘যোগাযোগের অসুবিধার কারণে পঞ্চায়েত থেকে সব সময় খবরাখবর নেওয়া যায়নি ঠিকই। কানগড়ের মানুষজনও তাঁদের সমস্যা পঞ্চায়েতে জানাননি।’’

বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্তের আশ্বাস, “গ্রামে গিয়ে সমস্যার খোঁজ নেব। সাধ্যমতো তা পূরণের চেষ্টাও হবে।’’

আশ্বাসে বুক বেঁধে তাই উন্নয়নের অপেক্ষায় কানগড়, স্বাধীনতার পঁচাত্তরেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE