Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থী তৃণমূলের, পেশায় ছুৎমার্গ নেই শিল্পী প্রশান্তের

রুটি-রুজির তাগিদে লেখা ও রেখায় ফুটিয়ে তোলেন কারুকাজ। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সেই লেখা ও রেখার টানেই দেওয়াল ভরাতে শুরু করে দিলেন চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কুশমেটে।

নিজের দেওয়াল লিখছেন প্রার্থী তথা চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কুশমেটে। নিজস্ব চিত্র

নিজের দেওয়াল লিখছেন প্রার্থী তথা চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কুশমেটে। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

রুটি-রুজির তাগিদে লেখা ও রেখায় ফুটিয়ে তোলেন কারুকাজ। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সেই লেখা ও রেখার টানেই দেওয়াল ভরাতে শুরু করে দিলেন চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কুশমেটে।

নানুরের পরোটা গ্রামে স্ত্রী, ছেলে। মেয়েকে নিয়ে বছর বাহান্নর প্রশান্তবাবুর ছোট্ট সংসার। মেয়ে ঊষা এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলে প্রলয় বর্ধমান আর্ট কলেজের ছাত্র। প্রশান্তবাবুও এক সময় বিশ্বভারতীতে কলাভবনের ‘সার্টিফিকেট কোর্সে’র ছাত্র ছিলেন। তারপর ‘ব্যাচেলার অফ ফাইন আর্টসে’ও ভর্তি হন। কিন্তু অর্থাভাবে সেই পড়া সম্পূর্ণ হয়নি তাঁর।

বাবা পূর্ণচন্দ্র কুশমেটে ছিলেন বিদ্যুৎ দফতেরর চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তাঁর আয়ের উপরেই নির্ভর করে চলত দুই ভাই, দুই বোনের পড়াশোনা-সহ ৭ সদস্যের সংসার। তাই ফাইন আর্টসের ডিগ্রি নেওয়া ভুলে লেখা ও রেখায় মনোযোগ দেন তিনি।

আজও ক্যানভাসে আঁকা, সিমেন্টের মূর্তি নির্মাণ ও আঁকা শিখিয়েই চলে তাঁর সংসার। এ বারে তাঁকে সংশ্লিষ্ট কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েত থেকে নানুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা করেছেন তিনি। নানুর ব্লক এলাকায় এখনও পর্যন্ত দেখা মেলেনি বিরোধীদের। বিশেষত মনোনয়নপত্র জমা করতে পারেননি তাঁরা। তাই অধিকাংশ জায়গায় তাঁদের দখল করা দেওয়াল ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। এ দিকে, প্রশান্তবাবু দলের দখল করা দেওয়াল নিজের নির্বাচনী প্রচার লিখনে ভরিয়ে তুলতে শুরু করে দিয়েছেন।

দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা তো বটেই, পাড়ার বাসিন্দারাও উৎসাহ যোগাচ্ছেন তাঁকে। স্কুলশিক্ষক প্রদীপ রায়, সঙ্গীতশিল্পী সমীরণ সরকার, আইনজীবী সরোজ মজুমদার, ব্যবসায়ী পার্থসারথি ঘোষরা বলেন, ‘‘প্রশান্ত একজন গুণী মানুষ। তাঁর মতো লোকেরা জনপ্রতিনিধি হলে এলাকার মানুষেরও ভাল হবে।’’

জনপ্রতিনিধিত্বের লড়াই প্রশান্তবাবুর অবশ্য এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালেও ওই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূলের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। গত নির্বাচনেও পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হন। শিল্পী স্বামীর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন চোখে দেখেন স্ত্রী শুক্লাদেবী? তিনি বলেন, ‘‘ওর আয়েই আমাদের সংসার চলে। ওইসব করতে গিয়ে নিজের কাজের ক্ষতি হয় ঠিকই, কিন্তু ওর জন্য যখন, কোনও মানুষ উপকৃত হয়েছেন শুনি তখন খুব ভাল লাগে।’’

তবে প্রশান্তবাবুর স্পষ্ট কথা, ‘‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য বিরোধীরা আমার কাছে কাজ করাতে আসেন না। কিন্তু পেশার ক্ষেত্রে আমার কোনও ছুৎমার্গ নেই। বিরোধীরা এলেও সমাদরের সঙ্গে সব কাজ করে দেব। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কাজের ক্ষেত্রে দলের অনুমতি না নিয়ে কিছু করতে পারব না।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দলের নীতি অনুসারে সব স্তরের মানুষকে সংসদীয় রাজনীতিতে সামিল করার লক্ষ্যেই ওই চিত্রশিল্পীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE