মনিটরে ধরা পড়ছে বাতাসের গুণগত মান। নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের একটা বড় অংশ তো বটেই, দেশের বড় শহরগুলিতে বাতাসের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায় শীতের শুরু থেকেই। এ বার বীরভূমের বাতাসের গুণগত মান নিয়েও উদ্বিগ্ন হওয়ার সময় এসে গেল।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে লাগানো ‘পলিউশন মনিটরিং স্টেশন’-এ মঙ্গলবার সকালে যে তথ্য ফুটে উঠেছে, তাতে এই উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য। এ দিন ওই এলাকার বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম দূষণকণার মাত্রা অত্যধিক বেশি ছিল। সকাল ১০টা ৫০ নাগাদ বাতাসের গুণগত মান বা ‘এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স’ (একিউআই) রেকর্ড হয়েছে ২৫১। যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলেই চিহ্নিত।
পরিবেশবিদের কথায়, মূলত পরিবেশ দূষণ, যেমন গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া, ধুলো, জ্বালানির ধোঁয়া, দাবানল, ফসলের অবিশষ্টাংশ (নাড়া) পোড়ানো-সহ নানা কারণে সৃষ্টি হয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। বাতাসে ভাসমান সেই কণাগুলিই দূষণকণা পিএম ২.৫ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’। বিপদ ডেকে আনে এরাই। পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, জেলার বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কণার উপস্থিতি যথেষ্টই চিন্তার। বিশেষত শীতে যখন বাতাস ভারী হয়ে থাকে। কুয়াশার সঙ্গে দূষিত বাতাস মিশে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। যা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
কারণ, এত সূক্ষ্ম মাপের দূষণকণা সরাসরি নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ছাড়াও দূষিত বাতাসে থাকে নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন মনো-অক্সাইড। যেখানে বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, সেখানে মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
হীরালাল ভকত কলেজ ছাড়াও নলহাটি পুরসভায় একই ধরনের মনিটার লাগিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ। সেখানেও ছবিটা এক। জানা যাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং স্টেশন লাগানো হয়েছে ওই কলেজেরই করা একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেটি একেবারে প্রধান রাস্তার ধারে। এখানে পাথর শিল্পাঞ্চল রয়েছে। কলেজের মাটি-জল-বাতাস পরীক্ষা করার জন্য যে ডিজিটাল ল্যাবরেটরি আছে, তার সাহায্যে গত ফেব্রুয়ারিতে নলহাটি পুর-এলাকার ৬টি জায়গায় বাতাসের গুণগত মান নিয়ে সমীক্ষা চালায় কলেজের ভূগোল বিভাগ।
ওই বিভাগের প্রধান নীলাদ্রি দাস বলেন, ‘‘৬টি এলাকার সমীক্ষা থেকেই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে আসায় আমরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জানাই। আবেদন করি ২৪ ঘণ্টা বাতাসের গুণমান যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার। পুরসভা ও কলেজে ওই যন্ত্র লাগে তার পরেই।’’ তাঁর সংযোজন, এখানে পরিস্থিতি খুব খারাপ। গুণগত মান এক দিন ৪১৪ হয়েছিন।
বাতাস বিশুদ্ধতার সূচক অনুযায়ী, কোনও এলাকায় বাতাসে ভাসমান দূষণকণার উপস্থিতি ৫০-এর নীচে হলে সেখানকার বাতাস বিশুদ্ধ বা ভাল মানের বলে চিহ্নিত। সেই পরিমাণ ১০০-র নীচে থাকলেও নিঃশ্বাস নেওয়ার গ্রহণযোগ্য বাতাস বলে মনে করা হয়। কিন্তু, ১০০ থেকে ১৫০ পিএম হলে সেটা অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা। ২০০-র বেশি হলে খুব খারপ ধরা যায়। নলহাটিতে পাথর শিল্পাঞ্চল থাকায় সেখানে সূচক ২০০-র উপরে। তবে তথ্য বলছে, জেলার অন্য অংশেও বাতাসের গুণগত মান আশাব্যঞ্জক নয়।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পাথর, বালি, কয়লা উত্তোলনের ভান্ডার বীরভূম। বেআইনি পাথর খাদান এবং হাজার হাজার ক্রাশার চলছে। খোলামুখ কয়লা খনিও আছে। কয়লা খনি গড়ার প্রস্তাবও রয়েছে। ফলে, দূষণের নিরিখে অগ্রগণ্য জেলাগুলির মধ্যেই রয়েছে বীরভূম।’’ তাঁর দাবি, যানবাহানের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া এবং সবুজ ধ্বংস করা বাতাসে দূষণের অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। তাঁর কথায়, ‘‘যন্ত্র কেবল বাতাসের গুণমান যাচাই করতে পারে। কিন্তু, বাতাস বিশুদ্ধ করতে হলে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও উপযুক্ত পদক্ষেপ দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy