স্বর্ণ বিপণির নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশ সুপার। বুধবার সিউড়ির পুলিশ লাইনের সভাকক্ষে। —নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার রানাঘাট এবং পুরুলিয়া শহরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় একই সময়ে একটি গয়না প্রস্ততকারক সংস্থার দু’টি বিপণিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তার প্রেক্ষিতে তৎপর হয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশও।
বুধবার দুপুরে সিউড়ি পুলিশ লাইনে জেলার বেশ কিছু গয়না বিপণির মালিকদের নিয়ে (মূলত বড় বিপণি) একটি বৈঠক করেন জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। কী ভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে কী করণীয়, সে ব্যাপারে বিশদে আলোচনা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘স্বর্ণ বিপণিগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে ওঁদের সচেতন করা হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে ওঁরা সেই ব্যবস্থাগুলি পুজোর আগেই নিশ্চিত করেন।’’ তবে ঠিক কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা খোলসা করেননি পুলিশ সুপার। তবে, সামনের টানা উৎসবের মরশুমে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।
উপস্থিত স্বর্ণ বিপণির মালিকদের একাংশ আড়ালে জানিয়েছেন, মূলত নিরাপত্তা কী ভাবে আরও আঁটোসাঁটো করা যায়, এমন চার পাঁচটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন পুলিশ সুপার। যেমন, স্বর্ণবিপণির প্রবেশ দ্বারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো। সম্ভব হলে ‘সেন্সর গেট’ লাগানো, যাতে প্রথমেই বিপদের আভাস পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, নজর ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ভিন্ন ব্যবস্থা। স্বর্ণ বিপণি মালিকেরা জানিয়েছেন, প্রায়ই লুটপাটের পরে দুষ্কৃতীরা সিসি ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। মঙ্গলবারের ঘটনায় তেমনটাই ঘটেছে। যাতে ওই ফুটেজ অন্যত্র (ক্লাউড স্টোরেজ) সুরক্ষিত রাখা যায়, তার পরমার্শ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। তৃতীয়ত, ‘সাইলেন্ট অ্যালার্ম সিস্টেম’ রাখা। যাতে দুষ্কৃতীদের বন্দুকের নলের সামনে থেকেও সন্তর্পণে পুলিশকে খবর দেওয়া যায়। সম্ভব হলে পৃথক একটি ঘর থেকে নজরদারির ব্যবস্থা রাখা। আরও যে বিষয়টিতে পুলিশ জোর দিয়েছে, সেটা হল স্বর্ণ বিপণির নিরাপত্তারক্ষীর অবস্থান ও কর্তব্য সম্পর্কিত। বিপদ বুঝলে রক্ষীর কী করণীয়, সে ব্যাপারে তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে পুলিশ।
পুলিশকর্তারা মনে করছেন, যে কায়দায় দু’টি জেলায় গয়নার দোকানে ডাকাতি হয়েছে, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বীরভূমে তেমন হওয়া অসম্ভব নয়। প্রায় একই কায়দায় এ বছর জুনে প্রকাশ্য দিবালোকে সিউড়ি সদরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ডাকাতির ঘটনার কিনারা হয়নি এখনও। গত ১৩ জুন ব্যাঙ্কের শাখা খোলার পর কর্মীদের শৌচাগারে আটকে রেখে ২৭.৯৯ লক্ষ টাকা এবং ৮০প্যাকেট গয়না লুট করে নিয়ে যায় ৬ সশস্ত্র দুষ্কৃতী।কিনারা হয়নি জেলা সদরে হওয়া ২০২১ সালের ১২ জুলাইয়ের ঘটনারও। সেদিন সিউড়ি থানার অদূরে সিউড়ির একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় ডাকাতির চেষ্টা করেছিল একদল দুষ্কৃতী। অ্যালার্ম কাজ করায় লুট তারা করতে পারেনি। তবে, শহরের রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো , গুলি চালিয়ে এক জনকে জখম করা থেকে বাইক ছিনতাই করে চম্পট দেওয়া— কিছুই বাদ ছিল না।
পুলিশের দাবি, অপরাধীরা ভিন্ রাজ্যের। তবে, বছর কয়েক আগে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগায়ো একটি নামি গয়না বিপণির শাখায় হওয়া ডাকাতির কিনারা করেছিল বীরভূম পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy