Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বৌভাতে হেলমেট উপহার

শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ি শহর থেকে কড়িধ্যা যাওয়ার রাস্তায় জাতীয় সড়ক ঘেঁষা একটি অনুষ্ঠান ভবনে বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল সিউড়ির ব্যবসায়ী সৌম্য রায়ের। 

নবদম্পতিকে হেলমেট প্রদান। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

নবদম্পতিকে হেলমেট প্রদান। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৯
Share: Save:

বিয়ের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানকে পথ নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা প্রচার মঞ্চ হিসাবে কাজে লাগিয়ে চমক দিল বীরভূম জেলা পুলিশ।

শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ি শহর থেকে কড়িধ্যা যাওয়ার রাস্তায় জাতীয় সড়ক ঘেঁষা একটি অনুষ্ঠান ভবনে বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল সিউড়ির ব্যবসায়ী সৌম্য রায়ের। আর পাঁচটা বিয়েবাড়ির মতোই ফুল ও আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান ভবন। বাজছিল সানাই। স্টিল গ্রে রঙের স্যুটে সৌম্য এবং লাল- নীল শেডের বেনারসিতে সেজে নববধূ সায়ন্তী অপেক্ষায় ছিলেন অতিথিদের। সন্ধ্যায় একে একে আসতে শুরু করলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

তখনই পুলিশের পোশাকে সেখানে হাজির হলেন সিউড়ির ওসি (ট্রাফিক) সুমন প্রামাণিক এবং সিউড়ি থানার এক আধিকারিক অমিত সিংহ। বিয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে বীরভূম পুলিশের তরফে নবদম্পতির হাতে তাঁরা তুলে দিলেন একটি স্মারক। নবদম্পতির বিয়ের ছবি দেওয়া সেই স্মারকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি পথনিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক বার্তা লেখা—‘স্লো ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। একই সঙ্গে সৌম্য-সায়ন্তীর হাতে তাঁরা তুলে দিলেন একটি করে হেলমেট।

এখানেই শেষ নয়, আমন্ত্রিতদের মেনু কার্ডেও ছিল মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচার—‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। ইদানিং বিয়ে, উপনয়ন বা অন্য অনুষ্ঠানে রক্তদান কিংবা চারাগাছ বিলির মতো সচেতনার প্রচার দেখা যাচ্ছে। তা বলে পথ-সুরক্ষার প্রচার! এমন ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না কেউই। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে এমন বার্তা দেখে প্রথমে অবাকই হয়েছিলেন অতিথিরা। তবে পরে সকলেই জেলা পুলিশের ওই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। আর নবদম্পতি বলছেন, ‘‘এটা আমাদের জন্যই চমক ছিল। মানুষের জীবন খুব মূল্যবান। সেই কথাটা বোঝাতে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানকে বাছায় ধন্যবাদ জেলা পুলিশকে।’’

কেন এমন ভাবনা?

জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় বীরভূম পুলিশ পথ নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা প্রচারে গত দু’বছর ধরে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এমন একটি সপ্তাহ নেই যে এই বিষয়ে প্রচার চলেনি। সচেতনতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যেই বাড়ির অনুষ্ঠানকে বাছা নতুন ভাবনা। কেননা এখানে সহজে এক সঙ্গে অনেক মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছনো যায়।’’

সিউড়ি শহরেরই বাসিন্দা রাজীব রায় ও স্মৃতিকণা রায়ের ছেলে সৌম্য। সম্বন্ধ করে সদ্য বিয়ে করছেন হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে সায়ন্তীকে। তাঁদের ছেলেমেয়েদের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যে ভাবে জেলা পুলিশ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বার্তা দিয়েছে, তাতে খুশি সৌম্য-সায়ন্তীর বাবা–মায়েরা। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘এমনটা প্রথম দেখলাম। সামাজিক অনুষ্ঠানে এই বার্তা অনেকের মনে গেঁথে যাবে। দারুণ কাজ করেছে বীরভূম পুলিশ।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তাঁদের বৌভাতের অনুষ্ঠানকে যে পথনিরাপত্তা বিষয়ক প্রচার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তার জন্য আগাম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ক্যাটারারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেনু কার্ডে প্রচার, নবদম্পতিকে হেলমেট দেওয়া বা তাঁদেরই বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি ব্যবহার করে স্মারক তৈরি করা—কোনওটাই হঠাৎ ছিল না।

কিন্তু এত বিয়ে থাকতে হঠাৎ সৌম্য-সায়ন্তীর বৌভাতকে বাছা হল কেন? ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিয়ের আগে মাথায় হেলমেট না থাকায় বেশ কয়েক বার জরিমানা দিয়েছেন সৌম্য। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আগে সৌম্য একা ছিলেন। এখন দু’জন। জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিনে পথচলার সাবধানতার কথাটা আর একবার স্মরণ করিয়ে দিতেই এমন ভাবনা।’’ সৌম্য নিজেও বলছেন, ‘‘হেলমেট না পরে বাইক চালানোর ভুল আর হবে না।’’ পাশে থেকে নববধূ— ‘‘হেলমেট ছাড়া আমিই যে ওকে বেরোতে দেব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Safety Traffic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE