Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হামলার জেরে আজ বন্‌ধ বিষ্ণুপুরে

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়াতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে, এত দিন নিচুতলার নেতা-কর্মীরাই মূলত আক্রান্ত হচ্ছিলেন।

জোটের মিছিল আটকে দিল পুলিশ

জোটের মিছিল আটকে দিল পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়াতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে, এত দিন নিচুতলার নেতা-কর্মীরাই মূলত আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এ বার সরাসরি হামলার শিকার হলেন বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোটের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য!

শনিবার রাতের ওই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার বিষ্ণুপুর শহরে বনধেরও ডাক দিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। এ বার ভোটে তুষারবাবু হারিয়েছেন শ্যামবাবুকে। তার পর থেকেই এই কেন্দ্রের বিভিন্ন গ্রামে জোট কর্মীদের উপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে, এ বার কংগ্রেস বিধায়কই আক্রান্ত হওয়ায় ঘটনা অন্য মাত্রা পেয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাতে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি হন তুষারবাবু। রবিবার সকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠানো হয়। তাঁর অভিযোগ, এই হামলা শ্যামবাবুর উপস্থিতিতেই হয়েছে। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শ্যামবাবু।

কী হয়েছিল শনিবার?

তুষারবাবু জানান, ওই দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোরঞ্জন পাত্রকে নিয়ে তিনি বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত তালড্যাংরা থানার শালতোড়া, সাতমৌলি ও আমড্যাংরা পঞ্চায়েত এলাকার ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে যান। শালতোড়ার মামড়া গ্রামে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিপিএমের একটি পার্টি অফিসও সে দিন তুষারবাবুরা খোলেন। বিষ্ণুপুর ফেরার পথে রাত আটটা নাগাদ শালতোড়ারই একটি চায়ের দোকানে গাড়ি থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, আচমকা এক দল তৃণমূল কর্মী দোকানের সামনে জড়ো হয়ে তুষারবাবুদের গালাগালি দিতে শুরু করেন। এই নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। এর পর ইট-পাটকেল নিয়ে হামলা শুরু করে তৃণমূল কর্মীরা।

তৃণমূলের মিছিল রুখল পুলিশ

পরিস্থিতি তেতে উঠছে দেখে চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন তুষারবাবুরা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন ঘিরে ফেলে গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কোনও মতে পালিয়ে তুষারবাবু, মনোরঞ্জনবাবুরা আমড্যাংরা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীরা ওই গাড়ির পিছনে ছুটতে ছুটতে পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত চলে আসে। ফাঁড়ির ভিতরেও কয়েকশো তৃণমূল কর্মী ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা প্রথমে হচকচিয়ে যান। ঘটনাচক্রে তখন লোডশেডিং হয়। জোটের কর্মীদের দাবি, তৃণমূল কর্মীরা বাইরে থেকে সার্চলাইট মেরে ফাঁড়ির ভিতরে তুষারবাবুদের খোঁজার চেষ্টা করে। ঘণ্টাখানেক এ ভাবেই ফাঁড়ি চত্বর দাপিয়ে বেড়ায় তারা।

ততক্ষণে খবর পেয়ে তালড্যাংরা ও বিষ্ণুপুর থানা থেকে বড় পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয় ওই ফাঁড়িতে। চলে আসেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও বিবেক বর্মা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আনা হয় র‌্যাফও। তখন চম্পট দেয় হামলাকারীরা। এর পর পুলিশ তুষারবাবুদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসে। অসুস্থ বোধ করায় কংগ্রেস বিধায়ককে রাতেই বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়। রবিবার বিষ্ণুপুর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন তুষারবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “শুধু হামলার ছক কষাই নয়, দাঁড়িয়ে থেকে হামলায় নেতৃত্বও দিয়েছেন শ্যামবাবু। চায়ের দোকানে আমাদের উপর হামলা চালাতে আসা তৃণমূল কর্মীদের ভিড়ে আমি শ্যামবাবুকে দেখেছি।’’

মনোরঞ্জনবাবুর দাবি, “আসলে পরাজয় হজম করতে পারছেন না শ্যামবাবু। তাই এ ভাবে হামলা চালানো হলো আমাদের উপরে।’’

এ দিকে, বিধায়ক মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খবর ছড়াতে শনিবার রাতেই জোট কর্মীরা ভিড় জমান হাসপাতালে। এ দিন সকালে বৈলাপাড়া কলেজ রোডে তুষারবাবুর বাড়িতেও জোট কর্মীদের ভিড় ছিল। জোটের তরফে শহরে মাইকিং করে সোমবার চব্বিশ ঘণ্টার বিষ্ণুপুর বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়।

ওই বনধের বিরোধিতা করে আবার এ দিন বিকেলে পুরসভা চত্বর থেকে তৃণমূল পাল্টা মিছিল করার জন্য জমায়েত শুরু করে। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করতে জড়ো হন কয়েক হাজার বাম-কংগ্রেস কর্মীও। দুই মিছিলকে ঘিরে শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে দেখে পুলিশ দু’টি মিছিলের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দু’টি জমায়েতস্থলই বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে ঘিরে ফেলে। শেষে যদুভট্ট মঞ্চের সামনে মাইক ছাড়াই সভা করেন জোট কর্মীরা। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোরঞ্জন বসু, বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষ। সভা থেকে শ্যামবাবুকে গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়।

জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শ্যামবাবুর অবশ্য দাবি, “আমি ওই সময়ে ওই গ্রামে কেন থাকব? সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের দলের কেউই যুক্ত নয়। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’

রবিবার বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur ruling party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE