Advertisement
১৮ মে ২০২৪

পর্যটনের অস্ত্র হোক রাসও, চাইছে বিষ্ণুপুর

পিরামিড আকৃতির ১০৮ দরজার রাসমঞ্চ মন্দিরই গোটা বিশ্বের কাছে বিষ্ণুপুরের পরিচয় তুলে ধরে। মল্ল রাজাদের আমলে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ হিসেবে খ্যাত বিষ্ণুপুরের রাস উৎসবের স্মৃতিও লেগে রয়েছে এই মন্দিরের গায়ে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ২৩:৫৯
Share: Save:

পিরামিড আকৃতির ১০৮ দরজার রাসমঞ্চ মন্দিরই গোটা বিশ্বের কাছে বিষ্ণুপুরের পরিচয় তুলে ধরে। মল্ল রাজাদের আমলে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ হিসেবে খ্যাত বিষ্ণুপুরের রাস উৎসবের স্মৃতিও লেগে রয়েছে এই মন্দিরের গায়ে। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এখনও বিষ্ণুপুরবাসীর কাছে অন্যতম সেরা উৎসব। তবে প্রাচীন এই শহরের রাস উৎসব পর্যটন ক্ষেত্রে তেমন প্রচার না পাওয়ায় নেহাতই স্থানীয় উৎসব হয়ে রয়ে গিয়েছে বিষ্ণুপুরের রাস। অথচ এই রাস উৎসবকে ঘিরে সুসংহত পরিকল্পনা মন্দির নগরীর পর্যটনকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে মনে করেনশহরের বাসিন্দারা।

বিষ্ণুপুরের ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষজন জানাচ্ছেন, মল্লরাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকেই বিষ্ণুপুরে কৃষ্ণ প্রেমের জোয়ার বয়ে গিয়ছিল। এখানকার রাজারা একের পর এক কৃষ্ণ মন্দির গড়ে তুলেছিলেন। ধুমধাম করে সেই মন্দিরগুলিতে পুজো হতো। রাসমঞ্চের প্রতিটি দরজায় রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ বসিয়ে রাস উৎসব পালিত হতো। শহরের মদনমোহন মন্দির, কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোল আনা কমিটি, মাধবগঞ্জ এগারো পাড়া কার্যকরী কমিটি-র রাস উৎসবে এখনও প্রাচীন সেই প্রথা দেখা যায়। রাধাকৃষ্ণের একাধিক বিগ্রহকে সাজিয়ে রাতে সব ক’টি বিগ্রহের আলাদা আলাদা ভাবে আরতি করা হয়। এই আরতি দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান রাস প্রাঙ্গণে। প্রাচীন এই উৎসবে অভিনবত্বের ছোঁয়াও লেগেছে। পাঁচ দিন ব্যাপী এই রাস উৎসব উপলক্ষে সেজে ওঠে এলাকা। প্রতিদিনই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাস কমিটিগুলি। থাকে নজরকাড়া আলোকসজ্জাও।

আজ, সোমবার থেকেই রাসের আনন্দে মেতে উঠবেন বিষ্ণুপুরের মানুষ। কৃষ্ণগঞ্জ রাস কমিটির তরফে এ বার বিশাল আকৃতির কৃষ্ণের মুখমণ্ডল গড়া হচ্ছে। সেই মুখের মধ্যেই সমগ্র বিশ্বকে দেখা যাবে। পাঁচ দিন ধরে স্থানীয় ও বাইরের বহু শিল্পীদের নানা অনুষ্ঠান বাড়তি আকর্ষণ। এ ছাড়া রাজভোগও বিতরণ হবে রাসের চার দিন। অন্য দিকে, মাধবগঞ্জ এলাকার রাস শুরু হবে যজ্ঞ দিয়ে। এই রাস কমিটিও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পাঁচ দিন। সঙ্গে থাকছে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। রাসকমিটির কর্তারাও চাইছেন উৎসব বাইরের মানুষের সামনে তুলে ধরা হোক।

কৃষ্ণগঞ্জ রাসকমিটির সভাপতি তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর রবিলোচন দে বলেন, “বিষ্ণুপুর মেলার মতোই শহরের মানুষের কাছে এই রাস উৎসবও সমান আকর্ষণীয়। মল্লরাজাদের কৃষ্ণ ভক্তিই এই শহরে রাস উৎসবের প্রচলন করেছিল। এর ইতিহাস ঠিকমতো তুলে ধরলে রাসের আকর্ষণ পর্যটকদের কছেও বাড়বে।’’ মাধবগঞ্জ রাস কমিটির সম্পাদক মিলন রক্ষিতের কথায়, “রাজ্যের মানুষ রাস মানেই বোঝেন নবদ্বীপ বা শান্তিপুর। বিষ্ণুপুর মেলাকে যে-ভাবে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, একই ভাবে এখানকার রাস উৎসবকেও প্রচারের আলোয় নিয়ে এলে শহরে পর্যটক আনাগোনা আরও বাড়বে।’’

বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোধ্যায় জানান, মল্লরাজাদের স্মৃতি বিজড়িত এই উৎসব যাতে ভাল ভাবে পালিত হয়, তার জন্য রাস কমিটিগুলিকে পুরসভা সর্বোত ভাবে সাহায্য করে। বাইরের মানুষের সামনে রাস উৎসবকে কি তুলে ধরা যায় না? বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “প্রাচীন এই উৎসব বিষ্ণুপুরের আকর্ষণ যে হতে পারে, সেটা আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে। মল্লরাজাদের গড়া রাসমঞ্চে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চিন্তাও করছি।’’ শীঘ্রই এ নিয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের সঙ্গেও আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourists Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE