Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Death

বিভেদ ঘুচিয়ে গ্রামের পাশে

মঙ্গলবার  সন্ধ্যার মুখে  রাজেশের মৃত্যুসংবাদ ভূতুড়া পঞ্চায়েতের ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বেলগড়িয়ায় পৌঁছতেই শোকের ছায়া নামে গোটা গ্রামে।

এখানেই সমাধিস্থ করা হবে রাজেশের দেহ। নিজস্ব চিত্র

এখানেই সমাধিস্থ করা হবে রাজেশের দেহ। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
বেলগড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৬:৫৫
Share: Save:

একটা মৃত্যু ভুলিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিভেদও। মহম্মদবাজাদের বেলগড়িয়া গ্রামে নিহত রাজেশ ওরাংয়ের শোকস্তব্ধ পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া, অভুক্ত আত্মীয়-পরিজনকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা, সমাধি ক্ষেত্র তৈরি থেকে গ্রামের কাঁচা রাস্তা মেরামতি— রাজনৈতিক মতাদর্শ দূরে ঠেলে এলাকার মানুষের সঙ্গে মিলিত ভাবে পাশে থাকলেন বিজেপি এবং তৃণমূল নেতারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার মুখে রাজেশের মৃত্যুসংবাদ ভূতুড়া পঞ্চায়েতের ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বেলগড়িয়ায় পৌঁছতেই শোকের ছায়া নামে গোটা গ্রামে। দেশের সেবায় বছর পঁচিশের সেনা জওয়ানের এ ভাবে চলে যাওয়াটা শুধু তাঁর পরিবার-পরিজনই নয়, শোকে ডুবিয়ে দিয়েছে গোটা গ্রামের মানুষ। মাত্র ২৭টি আদিবাসী পরিবারের বাস ওই গ্রামে। বুধবার কারও বাড়িতে রান্না হয়নি। সকলেই অপেক্ষায় থেকেছেন কখন ঘরের ছেলেকে একবার শেষ দেখা দেখবেন। অন্য দিকে, রাজেশের আত্মীয়েরা ভেসেছেন চোখের জলে। সেই শোকে কিছুটা সান্ত্বনা দিতেই পাশে দাঁড়ায় এমনিতে যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল।

এলাকার অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্রে কমিউনিটি কিচেন খুলে যেখানে সকলকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে সক্রিয় ভাবে হাত লাগিয়েছে তৃণমূল। অন্য দিকে, মৃত জওয়ানের সমাধি তৈরির ইট-সিমেন্ট-রড সরবারাহ করেছেন বিজেপি নেতা। তৃণমূলের ভূতুরা অঞ্চল সভাপতি বিকাশ চট্টপাধ্যায় এবং বিজেপি-র মহম্মদবাজার মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক তারাপদ দাসের প্রশ্ন, ‘‘এখানে বিভেদ কেন? প্রথমে আমরা ভারতীয়। দেশের জন্য যে ছেলেটা প্রাণ দিল, সেই পরিবার ও গ্রামের পাশে দাঁড়াতে আমাদের মাঝে রাজনীতি আসবে কেন?’’

এ দিন বিকেলেও গ্রামে মানুষের ঢল নেমেছে গ্রামের পথে। রাজেশের শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বহু মানুষ আসছেন। গ্রামের প্রবীণ মহিলা মালতি ওরাং বা বাইরে থেকে আসা পাপিয়া সর্দাররা বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা নেই খুব কষ্ট হচ্ছে। সেখানে রান্না খাওয়া করব কী করে। কিন্তু বাইরের লোকজন খাবারের ব্যবস্থা করেছিল। সকলেই পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন।’’

এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টায় গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিকাশবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘শোকার্ত পরিবার তো আছেই, তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের খাবারের ব্যবস্থা করা খুব প্রয়োজন। গ্রামের বাচ্চারাও অভুক্ত। সেই জন্যই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল। সেটাই করেছি।’’ তারাপদবাবু বলছেন, ‘‘রাজেশের দেহ সমাধিস্থ করার জন্য যা যা লাগে, সিমেন্ট-ইট-বালি-রড সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঁচা রাস্তায় দেহ আসাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য পাথরের গুঁড়ো ফেলে সেটা সংস্কারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দলমত নির্বিশেষে গ্রামের সকলেই।’’ আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেনও বললেন, ‘‘যতক্ষণ না দেহ আসছে এবং সমাধিস্থ করা হচ্ছে, আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death BJP TMC Rajesh Orang
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE