Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নিহতের স্ত্রী বললে জড়িতদের ধরিয়ে দেবে, দাবি বিজেপি-র

বোমায় নিহত পাড়ুইয়ের রবাই চৌধুরীকে নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি যেন থামছেই না। বিজেপি এবং তৃণমূল, পাড়ুইয়ে যুযুধান দু’দলই নিহত ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই নিজেদের দলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে দাবি করেছে। ইতিমধ্যে একাধিক বিজেপি নেতা-কর্মীর নামে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন রবাইয়ের ছেলে।

রবাই চৌধুরীর বাড়িতে বিজেপির প্রতিনিধি দল।—নিজস্ব চিত্র।

রবাই চৌধুরীর বাড়িতে বিজেপির প্রতিনিধি দল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

বোমায় নিহত পাড়ুইয়ের রবাই চৌধুরীকে নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি যেন থামছেই না। বিজেপি এবং তৃণমূল, পাড়ুইয়ে যুযুধান দু’দলই নিহত ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই নিজেদের দলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে দাবি করেছে। ইতিমধ্যে একাধিক বিজেপি নেতা-কর্মীর নামে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন রবাইয়ের ছেলে। এ বার বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করলেন, রবাইকে খুনের তাঁদের দলের নেতা-কর্মী বা সমর্থকেরাই দায়ী, এই মর্মে নিহতের স্ত্রী অভিযোগ করলে অভিযুক্তদের বিজেপি-ই পুলিশের হাতে তুলে দেবে!

রবিবার দুপুরে পাড়ুই থানায় দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করেন এ রাজ্যে বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। গত ৯ মার্চ বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় নিহত হন পাড়ুই থানার সাত্তোর পঞ্চায়েতের সালন গ্রামের বাসিন্দা রবাই। ঘটনার রাতেই সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে রবাইকে বিজেপি কর্মী বলে দাবী করেন নিহতের ছেলে আজিজুল। পর দিন অবশ্য তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সিউড়িতে গিয়ে রবাইকে তৃণমূলের কর্মী হিসাবে দাবি করেন। তখন তাঁর পাশে বসে আজিজুল। এর পরে একাধিক স্থানীয় বিজেপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাড়ুই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ছেলে আজিজুল। ওই খুনের ঘটনায় পুলিশ যে চার জনকে ধরেছে, তাঁরাও এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত।

রবাই কাদের কর্মী, এই নিয়ে তখন থেকেই দু’দলে টানাপড়েন চলছে। ইতিমধ্যেই রবাইয়ের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা বিকাশ রায়চৌধুরী। আর রবিবার সালন গ্রামে যায় বিজেপি-র প্রতিনিধিদল। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ শমীকবাবুর নেতৃত্বে জয়প্রকাশ মজুমদার, বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল-সহ দলের কর্মী-সমর্থক সালন গ্রামের দিকে রওনা হন। অন্য দিকে, সিউড়ির দিক থেকে বিজেপি-র মহিলা ও ছাত্র সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী বোলপুর-সিউড়ি রাস্তা ধরে সালনের দিকে এগোচ্ছিলেন। দেবগ্রামের কাছে পুলিশ আটকে দেয় এই কর্মী-সমর্থকদের। আবার মাঝিপাড়ার কাছে শমীকবাবুদের পথ আগলে দেয় বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়, বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বাধীন পুলিশ বাহিনী। শমীকবাবুকে পুলিশকর্তারা এত গাড়ি এবং কর্মী সমর্থক নিয়ে সালন গ্রামে না যাওয়ার অনুরোধ করেন। অনুরোধ মেনে শেষ অবধি দু’টি গাড়ি ও কিছু মোটরবাইক নিয়ে ওই গ্রামে যান বিজেপি নেতারা। রবাইয়ের বাড়িতে গিয়ে অবশ্য তাঁর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে কাউকেই পাননি বিজেপির ওই প্রতিনিধিদল। নিহতের ভাই, দিদি এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

পরে শমীকবাবু রবাইকে বিজেপি কর্মী হিসাবে দাবি করে বলেন, “ওঁর মৃত্যুতে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি।” তাঁর আরও দাবি, এলাকার বাসিন্দারা তৃণমূলের আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশ সরে গেলেই, ফের ভয়ঙ্কর গণ্ডগোল বাধবে, এমন আশঙ্কার কথা বারবার বাসিন্দারা তাঁদের জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “গত ডিসেম্বরে আমি নিজে রবাইয়ের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছি। আমাদের দলের কর্মী বলে তৃণমূল পরিকল্পনা করে ওঁকে খুন করেছে।” শমীকবাবুর অভিযোগ, “শাসক দল তৃণমূল খুনের রাজনীতি করছে। ইলামবাজার, পাড়ুই থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে আর পরিকল্পনা করে মিথ্যা মামলায় আমাদের নিরীহ ও নিরপরাধ দলীয় কর্মী সমর্থকদের ফাঁসাচ্ছে।”

পরে পাড়ুই থানায় গিয়ে বিজেপি নেতারা ওসি অমরজিত্‌ বিশ্বাস সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের ধরার আর্জি জানান। শমীকবাবু বলেন, “ নিহতের স্ত্রী যদি অভিযোগ করেন, বিজেপি-র নেতা, কর্মী বা সমর্থকেরা রবাই চৌধুরীকে খুন করেছে, তবে বিজেপি-ই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্তদের পাড়ুই পুলিশের হাতে তুলে দেবে।”

কিন্তু, নিহতের ছেলেই তো আপনাদের দলের লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে? এ প্রশ্নের জবাবে দুধকুমারের পাল্টা দাবি, তৃণমূল চাপ দিয়ে নিহতের ছেলেকে দিয়ে বিজেপি-র নামে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে।

জেলা বিজেপি সভাপতি বলেন, “নিহতের স্ত্রীকে থানায় অভিযোগ জানাতে বলছি না। সংবাদমাধ্যম বা অন্য কোথাও যদি ওই মহিলা বলেন যে আমাদের কর্মীরা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তা হলেও অভিযুক্তদের আমরা পুলিশের হাতে তুলে দেব।” বিজেপি-র সমস্ত অভিযোগ অবশ্য তৃণমূল উড়িয়ে দিয়েছে।

তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তাফা বলেন, “চোরের মায়ের বড় গলা। খুন করাচ্ছে, করছে নিজেরাই। আর অভিযোগ জমা হলে বলছে, দুষ্কৃতী ধরিয়ে দেবে। সবকিছুতেই তৃণমূল দেখছে বিজেপি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

robai shekh murder case bjp parui
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE