E-Paper

ধ্রুব, জগন্নাথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের

বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা পঞ্চাশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী ও অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের একাংশ সিউড়ি জেলা কার্যালয়ের সামনে মিছিল করে এসে জড়ো হন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১৩
সোমবার সিউড়ির বিজেপি জেলা পার্টি অফিসের সামনে ধ্রূব সাহা ও জগন্নাথ চট্ট্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান এক দল সমর্থক।

সোমবার সিউড়ির বিজেপি জেলা পার্টি অফিসের সামনে ধ্রূব সাহা ও জগন্নাথ চট্ট্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান এক দল সমর্থক। দুদল সমর্থক নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন।জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বিক্ষোভ কারীদের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেন। ছবিঃ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য নেতৃত্বের সামনেই জেলা সভাপতি ও রাজ্য স্তরের আর এক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিজেপি কর্মীরা। বচসা গড়াল ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিতে। সোমবার সিউড়িতে এই ঘটনার পরে অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।

এ দিন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা ও বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন দলের নেতাকর্মীদের একাংশ। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সিউড়ি জেলা কার্যালয়ের সামনে যখন এমনটা ঘটছে, তখন কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন।

ঘটনার পরেই অবশ্য বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে ডেকে নেওয়া হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে তাঁদের বক্তব্য মন দিয়ে শোনেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। বৈঠকের পরে বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

বিজেপির একটি সূত্র বলছে, অন্য সাংগঠনিক জেলায় জেলা সভাপতি বদল হলেও ধ্রুব সাহাকে টানা তৃতীয় বারের জন্য বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদে বসানোর পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ জমছিল। সেটা আরও বাড়ে সম্প্রতি সাংগঠনিক জেলার আট মণ্ডল সভাপতিকে অপসারিত করায়। কিছুদিন আগে ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে নলহাটিতে একটি বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। সমাজমাধ্যমে দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগও তোলা হয়েছিল। ইঙ্গিত ছিল, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা পঞ্চাশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী ও অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের একাংশ সিউড়ি জেলা কার্যালয়ের সামনে মিছিল করে এসে জড়ো হন। তাঁদের হাতে ছিল বীরভূম বিজেপি বাঁচাও পোস্টার। সেখানে ধ্রুব ও জগন্নাথের ছবির উপরে লাল কালিতে কাটা চিহ্ন আঁকা ছিল।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ তোলেন, দলীয় নেতৃত্ব শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন। দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারীরা বক্তব্য রাখতে শুরু করার পরই কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন ধ্রুব ও তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, মাইক কেড়ে নেওয়া হয় এক বিক্ষুব্ধ নেতার হাত থেকে। এরপর দু’পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জগন্নাথ সকলকে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ডেকে নেন।

জগন্নাথ এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। ধ্রুব পরে বলেন, ‘‘আমাদের ভাইয়েরা এসেছিলেন। পরিবারের বিষয়। তাঁদের অনেক দুঃখ কষ্ট ছিল। মোদীজি প্রধানমন্ত্রী হোন সেটাই সবাই চাইছে। তাঁরা কাজ করতে চাইছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। কোনও হাতাহাতি হয়নি।’’ তবে ধ্রুব প্রসঙ্গ এড়ালেও দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর বিরুদ্ধেই দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সংগঠনের ফাঁকফোঁকর সামনে এনে দিয়েছে বলে দলেরই অনেকে মানছেন। বিজেপির রাষ্ট্রীয় সচিব অনুপম হাজরা এ দিন বোলপুরে বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা অশনি সঙ্কেত। যাঁরা আজ বিক্ষোভ দেখলেন তাঁরা অনেকবার তাঁদের কথা নেতৃত্বকে বলতে চেয়েছিলেন। এঁরা বর্তমানে দলের কোনও পদে নেই। সেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ।’’

বৈঠকের পর প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও উপস্থিত নেতাদের একাংশ বলছেন, হঠাৎ করে পদাধিকারিদের অপসারণ, ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেওয়া, দলের নিষ্ঠাবান কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করেননি। বিক্ষোভকারী এক নেতা বলেন, ‘‘সতীশ ধন এসেছেন শুনেই তাঁর সামনে অভিযোগ তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিই।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা কাজ করতে চাইছেন তাঁদের প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সতীশ।

বিজেপির এই কোন্দলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। ওদের শেয়ারের দাম কমেছে। তাই নিজেরা মারপিট করছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Political Conflict Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy