Advertisement
E-Paper

বাঁকুড়ায় চার ওয়ার্ড জিতেও প্রশ্ন অনেক বিজেপি-তে

চার আসনে জয় চমক হতে পারে, সাফল্য নয়। বাঁকুড়ায় এমনই বলছেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীরা। লোকসভা ভোটের পর যে ভাবে সাড়া জাগিয়েছিল তারা, গত এক বছরে সেই হাওয়া অনেকটাই দুর্বল। ভাবা গিয়েছিল, এ বার পুর-নিবার্চনে দাগ কাটতে পারবে না তারা। কিন্তু, বাঁকুড়ার দুই পুরসভায় চার আসন দখল করে বিজেপি জানান দিল, হাওয়া পুরোপুরি স্তিমিত হয়নি এই জেলায়।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৮

চার আসনে জয় চমক হতে পারে, সাফল্য নয়। বাঁকুড়ায় এমনই বলছেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীরা।

লোকসভা ভোটের পর যে ভাবে সাড়া জাগিয়েছিল তারা, গত এক বছরে সেই হাওয়া অনেকটাই দুর্বল। ভাবা গিয়েছিল, এ বার পুর-নিবার্চনে দাগ কাটতে পারবে না তারা। কিন্তু, বাঁকুড়ার দুই পুরসভায় চার আসন দখল করে বিজেপি জানান দিল, হাওয়া পুরোপুরি স্তিমিত হয়নি এই জেলায়।

দলের একাংশ অবশ্য বলছেন, সংগঠন সে ভাবে গড়তে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁদের। তাই সাময়িক চমক দিলেও সেই অর্থে সাফল্য আসেনি। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এই দুটি পুরসভায় মোট চারটি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছে বিজেপি। ঘটনা হল, গত বছর লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যানে বিজেপি চমকে দিয়েছিল এ রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে রাঢ়বঙ্গের দুই জেলা বীরভূম ও বাঁকুড়ায় তাদের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। লোকসভায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বাঁকুড়া বিধানসভা এলাকায় বামেদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। তার পর অনেকেই ভেবেছিলেন পুরভোটে এই জেলায় বড় সাফল্য পাবে গেরুয়া বাহিনী। পুরসভা দখল করতে না পারলেও অন্তত বিরোধী হিসেবে যে এই দল আত্মপ্রকাশ করবে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছিলেন।

জেলার দুই পুরসভা মিলিয়ে চারটি ওয়ার্ড জেতার পাশাপাশি বেশ কিছু ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে পুরভোটে চমক অবশ্যই দিয়েছে বিজেপি। তবে একে সাফল্য বলে মানতে নারাজ জেলার রাজনৈতিক মহল। বাঁকুড়া পুরসভার ১৬ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পাঁচটি ওয়ার্ডে। এই প্রথম বাঁকুড়া শহরে আসন পেল বিজেপি। আবার এটাও ঠিক, লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া পুরসভায় চারটি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকা বিজেপির এই ফলে দলের বহু কর্মী-সমর্থকই হতাশ। বাঁকুড়াই বাসিন্দা, বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার ভোটের পর অন্তত সাতটি ওয়ার্ড দখলে আসবে বলে দাবি করেছিলেন। ফলাফল আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের ‘চোখ রাঙানি’কেই দায়ী করছেন তিনি। যদিও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “ভোট শান্তিপূর্ণই হয়েছিল। বিরোধীরাও এ কথা মেনেছেন। কিন্তু, যে দলের সংগঠনই নেই, সেই দল জিতবে এটা আশা করাটাই ভুল। সব ক্ষেত্রে সন্ত্রাসের দিকে আঙুল তুলে পার পাওয়া যায় না।” সংগঠনের দুর্বলতার কথা অবশ্য মানছেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীরাও। পুরভোটের প্রচারে বাঁকুড়ার মাটি কামড়ে পড়েছিলেন জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী। তাঁর স্বীকারোক্তি, “ভোট কেন এতটা কমল, তা পর্যালোচনা করব। তবে, আমাদের দলীয় শক্তি আরও বাড়াতে হবে। সঙ্গে সমান তালে জেলার মাটিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’’ দলের জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটকেরও একই মত। তাঁর কথায়, “আগামী দিনে ভাল নেতা তুলে আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’

অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর শহরের সব ক’টি ওয়ার্ডে এ বার প্রার্থী দিতে না পারলেও দু’টি ওয়ার্ডে জিতে বিজেপি দেখিয়ে দিয়েছে, অল্প হলেও তাদের সমর্থন তৈরি হচ্ছে মন্দির-নগরীতে। বিশেষ করে এই পুরসভায় বামেরা যেখানে খাতাই খুলতে পারেনি, সেখানে ৫ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে আপাতত প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এ ছাড়াও, এই পুরসভার ১, ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট প্রাপ্তিতে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি-র প্রার্থীরা। কয়েকটি ওয়ার্ডে জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে ভোট প্রাপ্তির ব্যবধানও খুব বেশি নয়। এর আগে ১৯৮১ সালে বিষ্ণুপুরে ৩টি ওয়ার্ড পেয়েছিল বিজেপি। তার পর তিন দশকের খরা কাটিয়ে এ বারের ‘সাফল্য’। বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ তাই বলেছেন, “বিষ্ণুপুরে আমাদের সংগঠন যে বাড়ছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। আগামী বিধানসভা ভোটে আমরা আরও জোর লড়াই দেব।”

লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে উঠেছিল মোদী-ঝড়। যার প্রভাব পড়েছিল এ রাজ্যেও। বাঁকুড়ায় বহু সিপিএম এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তে। তার উপর সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল বিজেপি-কে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর, দুই পুর-শহরেই চোরাস্রোত বইছিল বিজেপি-র। কিন্তু, সেই স্রোতকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। যার ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বহু কর্মীই ফের তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। বাঁকুড়া শহরের তেমনই এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “লোকসভা ভোটের পরে ভেবেছিলাম বিজেপি-ই রাজ্যে বিকল্প শক্তি। কিন্তু, দলের নেতারা পথে নেমে কোনও বিষয় নিয়ে বড় মাপের আন্দোলন করেননি।’’

এই ক্ষোভ ক্রমেই ছড়িয়েছে দলের নিচুতলায়। বিধানসভা ভোটের আগে এটা যে দলের পক্ষে ভাল নয়, তার আঁচ পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বও। সুভাষ সরকার বলছেন, “জনসংযোগ বাড়ানোর দিকে নজর আমরা দিচ্ছি। পাশাপাশি বৃহত্তর আন্দোলনও গড়ে তোলা হবে।’’

Bankura bjp congress municipal election Modi election rajdip bandyopadhyaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy