E-Paper

উপহার বিশ্ববিদ্যালয়

কবি থাকতেন পঞ্চকোট রাজবাড়িতে। তৎকালীন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার কাছে কবির স্মৃতিতে কলেজের নামকরণের কথা শুনে বুদ্ধবাবু খুশি হয়েছিলেন।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৭
সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়।

সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

পিছিয়ে পড়া জেলা পুরুলিয়ার শিক্ষা বিস্তারেও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকা ছিল। তাঁর হাত ধরেই একাধিক কলেজ থেকে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে পুরুলিয়া।

২০০১ সালে ৭ জানুয়ারি পুরুলিয়ার কাশীপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন বুদ্ধবাবু। গোড়ায় কলেজে কলা বিভাগ থাকলেও বুদ্ধবাবুর উৎসাহে পরে কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। কলেজের পরিচালন সমিতির তৎকালীন সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের কথায়, ‘অনুষ্ঠান মঞ্চে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অমিতকুমার মল্লিককে বুদ্ধবাবু এই কলেজে বিজ্ঞান চালু করতে নির্দেশ দেন। বুদ্ধবাবু মঞ্চে বলেন, বিজ্ঞান না পড়তে পারলে ছেলেমেয়েরা কী ভাবে এগোবে? এখানে যেন বিজ্ঞান পড়ানো হয়।’’

শেষ জীবনে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্মসূত্রে বেশ কিছুকাল কাশীপুরে ছিলেন। কবি থাকতেন পঞ্চকোট রাজবাড়িতে। তৎকালীন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার কাছে কবির স্মৃতিতে কলেজের নামকরণের কথা শুনে বুদ্ধবাবু খুশি হয়েছিলেন।

তবে গোড়ায় কলেজ তৈরির মতো পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। বাসুবাবুর অনুরোধে পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজকন্যা মহেশ্বরী দেবী জমি দান করেন। তা জেনে মহেশ্বরী দেবীকে ধন্যবাদ জানাতে রাজবাড়িতে যান বুদ্ধবাবু। বামবিরোধী বলে পরিচিত পঞ্চকোট রাজ পরিবারের সদস্যদের তখন কার্যত এড়িয়ে চলতেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। বুদ্ধবাবু সেই ছুঁৎমার্গ ভাঙেন।

রাজকন্যা মহেশ্বরী দেবী বলেন, ‘‘কলেজের অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বিশেষ কিছু বলেননি। পরে হয়তো জেনেছিলেন, কলেজ গড়তে আমি চার একর ৪২ ডেসিমেল জমি দিই। অনুষ্ঠান শেষে সবে ফিরেছি। দেখি বুদ্ধবাবুর কনভয়ও রাজবাড়িতে ঢুকল।আমি অভ্যর্থনা জানালাম তাঁকে। শিক্ষা বিস্তারে জমি দান বড় কাজ বলে উল্লেখ করে সবার সামনে তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। আমি বসতে বলায় তিনি বসলেন। দক্ষিণের বারান্দায় বসে চা খেয়েছিলেন।’’ রাজবাড়ির ঝাড়লণ্ঠন চুরি হয়েছে শুনে তিনি তৎকালীন পুলিশ সুপার সাধন মণ্ডলকে খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তা উদ্ধার করে। রাজেশ্বরী দেবী জানান, পরেও বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। রাইর্টাসে দেখাও করেছেন। বাসুদেববাবুর মাধ্যমে বুদ্ধবাবু তাঁদের খোঁজখবর নিতেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘একজন নিপাট ভদ্র ও ভাল মানুষকে আমরা হারালাম।’’

পরে ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর নিতুড়িয়ার সরবড়ি মোড়ে পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয়েরও মূল ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন বুদ্ধদেব। পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই। ২০১০ সালের ৬ জুলাই বিধানসভায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির সংক্রান্ত বিল পাশ হয়। পালাবদলের পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Buddhadeb Bhattacharjee Death sidho kanho birsha university purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy