Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
সিউড়িতে আক্রান্ত চিকিৎসকও
siuri

হাসপাতালে বন্দির ‘হামলা’, জখম তিন

প্রতিদিন দুই থেকে তিন জন ব্রাউন সুগারের নেশা আসক্ত রোগী আসেন। সংখ্যাটা উদ্বেগের। চিকিৎসকদের একাংশ আড়ালে বলছেন, বাজারে সহজে নিষিদ্ধ নেশার দ্রব্যের সরবরাহ থাকার জন্যই পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

আহত চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

আহত চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০৩
Share: Save:

পুলিশ সেলে ভর্তি নেশা আসক্ত এক বন্দির তাণ্ডবের সাক্ষী রইল সিউড়ি জেলা হাসপাতাল। ওই বন্দির আক্রমণে জখম হলেন এক চিকিৎসক, এক স্বাস্থ্যকর্মী এবং এক নিরাপত্তা রক্ষী। হেনস্থার শিকার হতে হল নার্স –সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। শুক্রবার রাত পৌনে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ।

এমন ঘটনা হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, হঠাৎই ওই বন্দি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। ভাঙা কাচের টুকরো, লোহার ভাঙাচোরা জিনিস নিয়ে আক্রমণ করেন। কিন্তু, কী ভাবে জেলা হাসপাতালের পুলিশ সেলের মধ্যে আঘাত করার মতো হাতিয়ার পাওয়া গেল, তার সদুত্তর মেলেনি। হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ওই বন্দি না হয় নেশা আসক্ত। কোনও দাগি অপরাধী তো এ ভাবে আক্রমণ করে পালাতেও পারে।

হাসপাতালের সুপার শোভন দে শনিবার বলেন, ‘‘মারাত্মক ঘটনা। কেন, কার গাফিলতিতে এমনটা হয়েছে, বলতে পারব না। তবে ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে , সেটা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাচ্ছি। মৌখিক ভাবে আগেই জানানো হয়েছে।’’ সিউড়ি জেল সুপার আবদুল্লা কামাল বলছেন, ‘‘আমার কাছে হাসপাতালের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তবে পুলিশ নেশাগ্রস্তদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। অনেকেই মাদক না পেয়ে অসুস্থ হয়। তাদের তো এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালেই পাঠাতে হয়।’’

ঠিক কী ঘটেছিল?

জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, বছর পঁচিশের ওই বিচারাধীন অসুস্থ ওই বন্দিকে জেল থেকে হাসপাতালের পুলিশ সেলে আনা হয়েছিল শুক্রবার বিকেল ৩টে নাগাদ। তখন দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক (মেডিসিন) অভিষেক রায়। তিনি যখন দেখেন কায়ামুদ্দিনের ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ (মাদক না-পেয়ে পাগলের মতো আচরণ করা) দেখা দিয়েছে, তিনি ওই বন্দিকে হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জিষ্ণু ভট্টাচার্যকে রেফার করেন।

ওই মনোরাগ চিকিৎসক বন্দিকে দেখেন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ। কিন্তু, তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ানো যাচ্ছিল না রোগীকে। হাসপাতালের কিছু স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘যত সময় গড়াচ্ছিল, তত আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিল ওই বন্দি। স্বাস্থ্যকর্মীদের তাক করে কাচ ছুড়তে থাকে। এক ওয়ার্ড বয় আঘাত পায়।’’ অভিযোগ, খবর পেয়ে যখন ওই রোগীকে দেখতে যান জিষ্ণুবাবু, তখনই তাঁকেও কাচ ছুড়ে আক্রমণ করেন ওই বন্দি। রক্তাক্ত হন ওই চিকিৎসক। জিষ্ণুবাবু এ দিন বলেন, ‘‘অভিষেক রায় ও আমি, দু’জনেই বন্দিকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেলের মধ্যে গিয়ে তাঁকে বলেছিলাম ওষুধ খেতে। কিন্তু, তার আগেই আমাকে আক্রমণ করে বসে।’’ আঘাত পান সেলের দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তা রক্ষীও।

গোটা ঘটনায় হাসপাতালের পুলিশে সেলের নিরাপত্তার ত্রুটির বিষয়টিই সামনে এসেছে। জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে তিন জন ব্রাউন সুগারের নেশা আসক্ত রোগী আসেন। সংখ্যাটা উদ্বেগের। চিকিৎসকদের একাংশ আড়ালে বলছেন, বাজারে সহজে নিষিদ্ধ নেশার দ্রব্যের সরবরাহ থাকার জন্যই পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অনেকেই ড্রাগ না পেয়ে ভয়ানক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। তাতে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যেমনটা হয়েছে শুক্রবার। বীরভূমের পুলিশ সুপার মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE