ভোট দিচ্ছে পড়ুয়া। লাভপুর ঠিবা প্রাথমিক স্কুলে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
ভোটাধিকার পেতে এখনও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে ওদের। অথচ তাদের ভোটেই নির্বাচিত হল মন্ত্রিসভা। কোনও ছাপ্পা, রিগিং নয়। গোপন ব্যালটে হল নির্বাচন। নির্বাচনের বৈধতার কথাও মেনে নিলেন নির্বাচন কর্মীরা। শনিবার নির্বাচনটি হয় লাভপুরের ঠিবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ দিন ছিল ওই স্কুলের শিশু সংসদের নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় মন্ত্রিসভা।
স্কুলশিক্ষা দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ বিকাশের লক্ষ্যে ২০১০ সালে স্কুলে স্কুলে শিশুসংসদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই মতো ঠিবা স্কুলেও ওই সংসদ গঠিত হয়। কিন্তু, এত দিন ওই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মনোনীত পড়ুয়াদের নিয়েই সংসদ গঠিত হত। এ বারই প্রথম নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হল সংসদ। ‘ইকুই ডাইভারসিটি ফাউন্ডেশন’ ওই নির্বাচন পরিচালনা করে। ইতিমধ্যে ১৬টি স্কুলে নির্বাচনের মাধ্যমে শিশুসংসদ গঠনের ব্যবস্থা করেছে ওই সংস্থা।
এক সময় অধিকাংশ স্কুলেই প্রতিটি ক্লাসে একজন করে মনিটর নিয়োগের রেওয়াজ ছিল। ওই সব মনিটরদের কাজ ছিল চক-ডাস্টার রক্ষণাবেক্ষণ, ছড়ির ব্যবস্থা করা এবং পড়ুয়াদের অভাব, অভিযোগ, আচরণের কথা শিক্ষকদের জানানো। বর্তমানে ওই রেওয়াজটি আর নেই বললেই চলে। মনিটরদের জায়গা নিয়েছে মন্ত্রিসভা। নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি স্কুলে এক বছরের মেয়াদে ছয় জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় ওই সংসদ। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই গঠিত হয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা-পরিবেশ, খাদ্য, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি এমনকি লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ বিভাগও রয়েছে মন্ত্রীসভায়। মন্ত্রীদের কাজও নিদিষ্ট। মিড-ডে মিল দেখভালের দায়িত্ব খাদ্যমন্ত্রীর উপরে ন্যস্ত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখবে ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত নখ, চুল কাটে কি না। কার দাঁত অপরিষ্কার রয়েছে ইত্যাদি বিষয়। পড়ুয়াদের গাফিলতি নজরে এলে তাকে সাবধান করে একবার সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে কাজ না হলে শিক্ষকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে মন্ত্রিসভা। আর প্রধানমন্ত্রী করেন সমন্বয় রক্ষার কাজ।
এ দিন ওই স্কুলের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ৪২ জন পড়ুয়াকে নির্বাচক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। তাদের হাতে ব্যালট হিসেবে দেওয়া হয় একটা করে সাদা কাগজ। সেই কাগজে ৪২ জন পড়ুয়ার মধ্যে যে কোনও চার জনের নাম গোপনে লিখে ব্যালট বাক্সে ফেলতে বলা হয় নির্বাচকদের। তাদের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপক হিসেবে ক্রমানুসারে ৬ জনকে বেছে হয়। তার পরে নির্বাচিতরা মিলে গঠন করেন মন্ত্রিসভা। এমন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মিলি বাগদি, চতুর্থ শ্রেণির প্রকাশ বাগদিরা। তারা বলছে, ‘‘এত দিন বাবা-মায়েদের মুখে ভোট দেওয়ার কথা শুনেছি। আজ আমরাও বাড়ি গিয়ে ভোট দেওয়ার গল্প করব।’’
খুশি মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণির লিপি বাগদি, খাদ্যমন্ত্রী সুব্রত বাগদিরা জানায়, স্কুলের বন্ধুরা মন্ত্রী বলে ডাকবে, এটা ভেবেই বেশ মজা লাগছে। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শতাব্দী চট্টোরাজ, টুম্পা ঘোষ মণ্ডল, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, শিশুসংসদ নির্বাচন দেখে স্কুলবেলার মনিটারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সেই সময় মনিটররাই ক্লাস পরিচালনার পাশাপাশি শিক্ষকদের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করত। প্রিসাইডিং অফিসার তথা নির্বাচন কর্মী হিসেবে হাজির ছিলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানবেন্দ্রনাথ দাস, রূপায়নকারী সংস্থার পক্ষে ঝুমা গঙ্গোপাধ্যায় হাজরা, শিক্ষাবন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ঠিবা পঞ্চায়েত সদস্য সুকান্ত পালেরা। তাঁরা জানান, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত মন্ত্রিসভা স্কুলের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পড়ুয়াদের মধ্যে নেতৃত্বগুণও গড়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy