অবিরাম বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ল দু’জেলার বিভিন্ন এলাকা।
বিষ্ণুপুর ব্লকের রাধানগর পঞ্চায়েতের ধানগোড়ায় বেশ কয়েকটি বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে পড়ে। বৃদ্ধ সাধন মাঝি জানান, পরিবারের ছোট-বড় মিলিয়ে সাত সদস্য রাতভর খাটে রাত জাগেন। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার দুপুর থেকে তুমুল বৃষ্টি নামে। সন্ধ্যায় জল ঘরে ঢুকতে শুরু করে। রাতে হাঁটুর উপরে জল উঠে যায়। খাবার দাবার যা ছিল জলে ভেসে গিয়েছে। প্রায় অভুক্ত অবস্থায় খাটে উঠে রাত জাগি। ঘরের অবস্থাও ভাল নয়। তাই আতঙ্কে ছিলাম।’’ তাঁর আক্ষেপ, এ দিন সকালেও প্রশাসনের তরফে কেউ খোঁজ নিতে আসেনি।’’ ধানগোড়া মোড়ে মনসা কুন্ডুর দোকান ও ঘরেও জল ঢোকে। তাঁর দাবি, ‘‘দোকানের জিনিসপত্র ও ঘরের আসবাবপত্র জলে নষ্ট হয়েছে।’’ এ দিন বেলার দিকে তাঁদের খবর নিতে যান স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রামপ্রসাদ বাগদি। তিনি বলেন, “একটি পাইপ দিয়ে মাঠের জল বেরোতে পারছে না। তাই লোকের বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। আরও একটি পাইপ বসানো হবে।’’ বিডিও (বিষ্ণুপুর) সোমশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘দুপুরে তাঁদের একটি স্কুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।’’
ধারাবাহিক বৃষ্টিতে ফের জলের তলায় তালড্যাংরার হাড়মাসড়া সংলগ্ন শিলাবতী নদীর ইঁটাপোড়া কজ়ওয়ে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে ওই রাস্তা দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয়েরা। মহকুমা সদর খাতড়ার সঙ্গে তালড্যাংরা ব্লকের একটা বড় অংশের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলে ডুবেছে সিমলাপালের পাথরডাঙা সংলগ্ন শিলাবতী নদীর কজ়ওয়ে। ফলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে লক্ষ্মীসাগর-বাঁকুড়া ভায়া হাড়মাসড়া রাস্তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন।
এ দিকে, ভারী বর্ষণে পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর ব্লকে ৫০টিরও বেশি কাঁচা ঘর ভেঙেছে। বলরামপুর শহরের রেজিস্ট্রি পাড়ার বাসিন্দা দয়াময় মুখোপাধ্যায়, মুদিডি গ্রামের কার্তিক মুদি জানান, আতঙ্কে দিন কাটছে। বলরামপুর কলেজের আদিবাসী সেন্ট্রাল হস্টেল চত্বরে জল জমায় আবাসিকেরা সমস্যায় পড়েছে। বিডিও (বলরামপুর) সৌগত চৌধুরী বলেন, ‘‘ফুলচাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি ফাঁকা হস্টেলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ত্রিপলের ঘাটতি রয়েছে। জেলায় আবেদন করা হয়েছে।” কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সোমবার বলরামপুরে ১৫০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা জেলার মধ্যে সর্বাধিক। পোনবাইদ জোড়ে কজ়ওয়ে ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ দিনও বান্দোয়ান ও বোরোর একাধিক কজ়ওয়ে জলে ডুবে ছিল। টোটকো জলাধার থেকে তিন হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। বোরোর মামড়ো-রঘুনাথপুর কজওয়ে এবং জয়পুর কজ়ওয়ে, বান্দোয়ানের কুঁচিয়া থেকে ধাঁদকা যাওয়ার পথে কজ়ওয়ে জলমগ্ন রয়েছে। বান্দোয়ান ও বোরো এলাকায় চাষের জমি ডুবে রয়েছে। বান্দোয়ান চিরুডির বড়ডি গ্রামের রাস্তায় জমেছে হাঁটুজল।
চাষেও ক্ষতি হয়েছে। পাত্রসায়রে হরিণমুড়ির জল উপচে প্লাবিত হয়েছে কুশদ্বীপ ও জামকুড়ি পঞ্চায়েতের কয়েকশো বিঘা জমি। জামকুড়ির বলরামপুর, বাগডহরা ও কুশদ্বীপের চাদরা, পাণ্ডুয়ার কয়েকশো বিঘা জমি জলের তলায়। পান্ডুয়ার আইনাল মিদ্যা, শুভাশিস নন্দী বলেন, ‘‘সোমবার ধান রোয়ার কাজ শেষ হল। তারপরেই বৃষ্টিতে সব জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)