তৃণমূলের বাধায় স্কুলের পরিচালন কমিটির নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না পারার অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। দাবি, কেবল মনোনয়নে বাধা নয় নিজের গ্রামেই বিধায়ককে মারধরও করা হয়েছে।
শনিবার মাড়গ্রামের ওই ঘটনার প্রতিবাদে থানায় অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হলেন কংগ্রেস ও বাম জোটের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মোর্চার প্রার্থীরা। একই সঙ্গে ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাঁসন কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ। পুলিশের তরফে অবশ্য পরস্পর-বিরোধী বয়ান মিলছে। স্কুলের ভিতরে কর্তব্যরত মাড়গ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ রাকেশ সাধু খান বলেন, ‘‘গন্ডগোলের খবর পেয়ে স্কুলে আসি।’’ স্কুলেই থাকা অন্য এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এগারোটা থেকে স্কুলে আছি কোনও গণ্ডগোল হয়নি!’’
পুলিশের তরফে এমন পরস্পরবিরোধী বয়ান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিল্টন।
এ দিন তাঁর দাবি, ‘‘১৮ ডিসেম্বর মাড়গ্রাম হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হবে। আজ শনিবার নির্বাচনের ৬টি আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার একটি মাত্র দিন ধার্য ছিল। সেই মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে গেটে বাধা দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। লাঠি দিয়ে মারধর করে বের করে দেয়!’’ বিরোধিদের অভিয়োগ, এ দিন সকাল ১১টা ২০ নাগাদ আট জন প্রার্থী সঙ্গে আট জন প্রস্তাবক এবং প্রার্থীদের সমর্থনকারীদের নিয়ে স্কুলের গেটে ঢুকতে গেলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রথমে গেটে ঢুকতে দেয়নি তাঁদের। সে সময় তাঁরা মাড়গ্রাম থানায় ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ যখন যায়, ততক্ষণে বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের লাঠি দিয়ে মারধর করে বের করে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিধায়কের দাবি, তাঁকে হেনস্থাও করা হয়েছে। এবং নিরাপত্তার অভাবে তাঁরা আর মনোনয়ন জমা দেননি এ দিন।
মিল্টনের বিধানসভা কেন্দ্র হাঁসন হলেও, তাঁর নিজের বাড়ি মাড়গ্রামে। আর সেই নিজের গ্রামেই এ দিনের ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর অনুগামীরা এ দিনের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁর নেতৃত্বে কিছুক্ষণের জন্য জোট সমর্থিত প্রার্থী এবং সমর্থকরা মাড়গ্রাম থানায় অবস্থান বিক্ষোভ করেন। এ দিন এলাকায় পৌঁছে দেখা যায় জোটের সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের হাতে মুখে পিঠে লাঠি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কংগ্রেসের রামপুরহাট ২ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী, জোট প্রার্থীদের সমর্থক দেবীপ্রসাদ মণ্ডলরা জানান, গন্ডগোলের জেরে তাঁদের চশমা হারিয়ে গিয়েছে। অপূর্ব চৌধূরী বলেন, “আমাকে পুকুরের জলে ফেলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়।” এনায়েত সরকার নামে একজন জোট সমর্থিত প্রার্থীর চোখে মুখে হাতে দেখা গেল আঘাতের চিহ্নও।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, মাড়গ্রামের ঘটনাই তার প্রমাণ।’’
এ দিন মাড়গ্রাম হাইস্কুলের ভিতর পৌঁছে দেখা গেল শতাধিক তৃণমূল কর্মী স্কুলের ভিতর বাইরে জড়ো হয়ে রয়েছেন। স্কুল চত্ত্বরে তৃণমূলের পতাকা লাগানো অনেকগুলি মোটর বাইক দাঁড় করানো আছে। স্কুলের ভিতরে মাড়গ্রাম ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুজাউদ্দিন, এলাকার তৃণমূল নেতা খন্দেকর মহম্মদ সফিউদ্দিন-সহ এলাকার সব দাপুটে তৃণমূল নেতারা রয়েছেন। তাঁদের দাবি, কোথাও গণ্ডগোল হয়নি। খন্দেকর মহম্মদ সফিউদ্দিনের দাবি, ‘‘ওরা প্রার্থীই জোগাড় করতে পারেনি। ওদের কোনও ক্ষমতা নেই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা জয়ী হয়েছি।’’
মাড়গ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরণ মোস্তফা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি সাড়ে ১০টার মধ্যে স্কুলে ঢুকেছি। স্কুলের ভিতরে কোনও কিছু হয়নি। আমি কোনও পুলিশ কর্মীকে স্কুলে আসতে বলিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy