গত ভোটের ঠিক উলট-পুরাণ!
জেলায় যে দলটিকে আগে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হত, তারাই এখন সব ক’টা আসনে প্রার্থী দিচ্ছে। আর বামেদের প্রবল ঝড়েও জেলায় যে দল একমাত্র বিরোধী ছিল, তারাই আজ প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না! শনিবার এ বারের পুরভোটের মনোনয়নপর্ব শেষ হতেই এমন চিত্র দেখা গেল বীরভূমে। জেলার চারটি পুরসভায় মোট ৭৩টি আসনেই প্রার্থী দিতে পেরেছে বিজেপি। উল্টো দিকে, সিউড়ি বাদে বাকি তিনটি পুরসভার বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। আবার এ বারই প্রথম রামপুরহাটের তিনটি আসনে নেই কোনও বাম প্রার্থী। কিছু ক্ষেত্রে শাসকদলের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে মনোনয়নপত্র তুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীরা এ নিয়ে সরব হলেও তৃণমূল সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছে। উল্টে এ ব্যাপারে বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দুষেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
শনিবার মনোনয়নপত্র তোলার শেষ দিন ছিল। সময়সীমা পার হতেই প্রশাসন প্রত্যেকটি পুরসভার জন্য চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বোলপুরে পুরসভার ২০টির মধ্যে অর্ধেক আসনেই কংগ্রেসের কোনও প্রার্থী নেই! দলীয় সূত্রের খবর, এ বার দল ১৪টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা করেছিল। কিন্তু, ১৩, ১৬, ১৭ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ওই চার প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। কেন প্রত্যাহার করলেন? এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা। যদিও বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জাহাঙ্গির হোসেনের অভিযোগ, “তৃণমূল কর্মীরা এ ক’দিন আমাদের প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে। ভয়ে আমাদের চার প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। তৃণমূলের ভোটে লড়ার সাহস নেই। তাই গত পঞ্চায়েত ভোটের মতোই ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের সরিয়ে রাস্তা সাফ করার নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে!” তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বোলপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের পাল্টা দাবি, “ওরা ২০টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিতে পারে না! ওদের কী এমন জনসমর্থন আছে যে, তৃণমূল তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতে যাবে!”
এ দিকে, রামপুরহাট পুরসভার তিনটি আসনে প্রার্থী নেই কংগ্রেসের। প্রার্থী হননি খোদ ছ’বারের কাউন্সিলর তথা দলের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। জিম্মি নিজে মুখে বলছেন, “অনেক হয়েছে। এ বার নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার সময় হয়েছে।” মুখে নতুনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও, সব আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি কংগ্রেস। তিনটি আসনের মধ্যে একটির ক্ষেত্রে প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে নিয়েছেন। একই সংখ্যক ওয়ার্ডে প্রার্থী নেই বামফ্রন্টেরও। শনিবারই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিআই-এর সেলিমা বিবি। এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, এ ক্ষেত্রেও বিরোধীরা তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছেন। অন্য দিকে, কংগ্রেস হাল খারাপ হয়েছে সাঁইথিয়াতেও। সেখানেও চারটি আসনে দলের প্রতীকের কোনও প্রার্থী নেই। অথচ গত ভোটে জিতে কংগ্রেসই বোর্ড গড়েছিল। জেলার এক সিপিএম নেতা বলছেন, “পঞ্চায়েত ভোটের মতোই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা প্রতি মুহূর্তে হুমকি দিচ্ছে। বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে আসছে। তাই চারটি পুরসভার বেশ কিছু আসনে বিরোধীদের কয়েক জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।” তৃণমূল নেতৃত্ব গোটাটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ দাবি করে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি শক্ত নেই। এই সব মিথ্যা অভিযোগ করে আসলে ওরা নিজেদের সংগঠনের দুর্বলতাকেই ঢাকতে চাইছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy