মেলার আগে শহরের রাস্তাঘাট সংস্কারে হাত দিয়েছে বিষ্ণুপুর পুরসভা। আর সেই কাজ নিয়েই দেখা দিল বিতর্ক। বুধবার মেলা কমিটির বৈঠকে বেশ কিছু সদস্য জেলাশাসক এবং জেলা সভাধিপতির কাছে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন। অন্য দিকে, মঙ্গলবার মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মায়ূরী ভাসু পুরসভায় চিঠি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ নিয়ে কিছু তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন কোন রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কত, কী কী উপাদান ব্যবহার হচ্ছে, খরচ কত এবং কাজ কত দিনের মধ্যে শেষ হবে ইত্যাদি। মহকুমাশাসকের দাবি, এটি রুটিন চিঠি। প্রশাসনিক নিয়ম মেনেই কাজের খুঁটিনাটি ফিরিস্তি জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনা শহরের রাজনীতিতে জল্পনা উসকে দিয়েছে।
কংগ্রেস প্রার্থী তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের কাছে বিধানসভা নির্বাচনে হারার পরে বিষ্ণুপুরে শ্যাম মুখোপাধ্যায় ধাক্কা খান। পরে তুষারবাবু অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে চলে আসায় শ্যামবাবু দলের মধ্যেই আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন বলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি। এই পরিস্থিতিতে সদ্য শুরু হওয়া একটি কাজ নিয়ে ২৬ বছরেরও বেশি সময়ের পুরপ্রধানকে প্রশাসনিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হওয়ায় তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জল্পনা বাড়িয়ে বিধায়ক তুষারবাবুও বলেন, ‘‘পেটোয়া ঠিকাদারদের দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করানো হচ্ছে বলে এলাকার অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’’
সম্প্রতি শহরে লিফলেট বিলি করে বেশ কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের কথা জানিয়েছিলেন শ্যামবাবু। তার মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্র স্ট্যাচু থেকে রামানন্দ কলেজ, পুলিশ চৌকি এবং চকবাজার ইন্দিরা মার্কেট— এই তিনটি রাস্তা। রয়েছে রামানন্দ কলেজ থেকে রাজদরবার হয়ে রাহা গ্যারাজ, কুমারী টকি সিনেমা হল থেকে সত্যপীর তলা এবং সেখান থেকে বোলতলা মোড়, বিষ্ণুপুর হাইস্কুল থেকে ছিন্নমস্তা মন্দির-সহ সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আরও বেশ কিছু রাস্তার নাম।
২৯তম বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর থেকে। তার আগে এতগুলি রাস্তা সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বুধবার মেলা কমিটির বৈঠকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী এবং কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। সূত্রের খবর, বৈঠকে কমিটির সদস্য তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সিংহ এবং বিষ্ণুপুর শহর তৃণমূলের নেতা মিলন রক্ষিত সরাসরি অভিযোগ করেন, মেলা বানচাল করার জন্য বেছে বেছে এই সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। এর ফলে মেলায় আসা পর্যটকেরা মুশকিলে পড়বেন। বর্তমানে মেলা কমিটির সিংহভাগ শ্যাম-বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। পুরপ্রধান হিসাবে শ্যামবাবু কমিটির সদস্য হলেও এ দিনের বৈঠকে তিনি ছিলেন না। পুরসভার কাজের বিষয়ে মেলা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করতে চাননি অরূপবাবু। তবে পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘মেলা শুরুর আগেই যাতে কাজ শেষ হয় তার জন্য পুরসভাকে বলব।’’
শ্যামবাবু যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘প্রশাসনিক চিঠির উত্তর দেওয়া হচ্ছে। মেলার আগেই কাজ শেষ করে ফেলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy