ঘরে তীব্র অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসার। সব উপেক্ষা করে করোনা ভাইরাস সচেতনতায় পট এঁকে, গান বেঁধে গ্রামে গ্রামে বার্তা দিয়ে বেড়াচ্ছেন দুই ভাই।
ময়ূরেশ্বরের সেরুনিয়া গ্রামে বাড়ি বরুণ ও অরুণ পটুয়ার। তাঁদের বাবা, প্রয়াত বাঁকু পটুয়া ছিলেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পটশিল্পী। ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, রাশিয়া, চিন-সহ বিভিন্ন দেশে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে পট দেখিয়ে সুনাম অর্জন করেন তিনি। ওইসব ছবি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী থেকে পাওয়া শংসাপত্রে তাঁর ঘর ভরে গিয়েছে। কিন্তু পট দেখিয়ে পেট ভরেনি তাঁর। সংসার টানতে হাটে বসে আনাজ বিক্রি, গ্রামে গ্রামে কাপড় ফেরি, প্রতিমা তৈরির মতো কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। ছেলেদেরও সেই দারিদ্র্য ঘোচে নি। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে বরুণ এবং অরুণই কেবলমাত্র পট আঁকেন। বাবার কাছেই তাঁদের পট আঁকার হাতেখড়ি।
পৌরাণিক, ধর্মীয়-সহ প্রচলিত নানা সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে পট আঁকার প্রচলন রয়েছে। সেই সঙ্গে সমকালীন বিষয়কে উপজীব্য করেও পটুয়ারা পট এঁকেছেন, গান বেঁধেছেন। প্রশাসন বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বরাত পেয়ে সাক্ষরতা, পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ, শৌচাগার, কন্যাশ্রী-সহ বিভিন্ন বিষয়কে অবলম্বন করেও পট এঁকে গান বাঁধতে হয়েছে তাঁদের। বরুণবাবুরাও বাবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রচারমূলক ওইসব পট এঁকেছেন। বেঁধেছেন গানও। কিন্তু সেইসব করেছেন পেটের তাগিদে। এ বারে মনের তাগিদে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা ও লকডাউনের প্রয়োজনীয়তাকে উপজীব্য করে দুই ভাই ৭ দিনের মধ্যেই এঁকে ফেলেছেন প্রায় ১২ ফুট লম্বা দুটি পট। গান বেঁধে সুরও দিয়েছেন। সেই পট কাঁধেই এখন দুই ভাই গ্রামে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সচেতনতার বার্তা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।