করোনায় আক্রান্ত হয়ে রেলকর্মীদের মৃত্যুর পরে, দেহ নিয়ে যেতে হচ্ছে পুরুলিয়ার আদ্রার পাশে বেকো ও আড়রা পঞ্চায়েতের দু’টি শ্মশানে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাতে আপত্তি তোলায় দাহকাজ নির্বিঘ্নে মেটাতে গিয়ে পুলিশ-প্রশাসন মুশকিলে পড়ছে। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার পরেই, নিজেদের জমিতে জনবিরল কোনও জায়গায় শ্মশান তৈরিতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। সূত্রের খবর, আদ্রার প্রান্তে রেলের জমিতে থাকা মনপুরা জঙ্গলে তেমন একটি শ্মশান তৈরি করতে চাইছেন রেলকর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার এই ব্যাপারে আদ্রার ডিআরএম নবীন কুমারের সঙ্গে আলোচনা করেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দিব্যা মুরুগেশন। এসডিও বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত লোকজনের দেহ সৎকারের জন্য তাঁরা নিজেদের জমিতে শ্মশান তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন।” আদ্রার ডিআরএম নবীন কুমার বলেন, ‘‘প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরে, শুধু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত লোকজনের দেহ দাহ করার জন্য মনপুরাতে শ্মশান তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রেলের আধিকারিকেরা ওই এলাকা পরিদর্শন করার পরে, কাজশুরু করা হবে।”
রেলশহর আদ্রায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ প্রচুর ছড়িয়েছে। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আগে পুরুলিয়ার বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মৃতদেহ দাহ হওয়ায় সমস্যা হয়নি। ওই চুল্লিতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরে, মৃত করোনা-আক্রান্তের দেহ নিজের এলাকার শ্মশানে সৎকার করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। তার পরেই সমস্য়ার সূত্রপাত। বেকো পঞ্চায়েত এলাকায় আদ্রা-কাশীপুর রাস্তার পাশে শান্তিধাম নামের শ্মশান রয়েছে। সূত্রের খবর, আদ্রা এলাকার করোনা আক্রান্তদের দেহ দাহ করা নিয়ে ইতিমধ্য়েই সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। বেকো পঞ্চায়েতের প্রধান সুশীল গরাই জানান, স্থানীয় কিছু লোকজনের বিরোধিতায় শান্তিধামে তিন-চার জনের দেহ শেষ পর্যন্ত সৎকার করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘শুনছি, মনপুরা জঙ্গলে রেল শ্মশান তৈরি করবে। সেটা হলে, সব দিকই দিয়ে সবারই সুবিধা হয়।”
সূত্রের খবর, শান্তিধামের ঘটনাগুলির পরেই রেলকে নিজেদের জমিতে শ্মশান তৈরির পরামর্শ দেয় প্রশাসন। এ দিকে, শুধু করোনা আক্রান্তদের দেহ সৎকারের জন্য মনপুরাতে আলাদা শ্মশান তৈরির দাবি ডিআরএমকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে রেলকর্মী সংগঠন মেন্স কংগ্রেসও। সংগঠনের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘনবসতি এলাকার পাশের শ্মশানে করোনা আক্রান্তদের দেহ দাহ করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যে সমস্ত রেলকর্মী ও অবসপ্রাপ্ত রেলকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, আমরা চাইছি, তাঁদের দেহ সৎকার করার জন্য় পুরোপুরি ফাঁকা জায়গা মনপুরাতে শ্মশান তৈরি হোক।’’
আড়রা পঞ্চায়েত এলাকার বেনিয়াশোলে রেলের নিজস্ব জমিতে একটি শ্মশান আছে। ওই এলাকা ঘন বসতিপূর্ণ হওয়ায় সেখানেও করোনা আক্রান্তদের দেহ দাহ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে মনে করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তাই আদ্রার প্রান্তে জনবিরল মনপুরা জঙ্গলে আর একটি শ্মশান তৈরির পরিকল্পনা। ডিআরএম জানান, নব্বই বছরে পুরনো বেনিয়াশোলের শ্মশানে সাধারণ ভাবে মৃত্যু হওয়া রেলকর্মীদের দেহ দাহ করা হবে।