করোনায় আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ গৃহ নিভৃতবাসে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এমন কয়েক জন রয়েছেন, যাঁদের দেখার কেউ নেই। আবার অনেকের পরিবার-পরিজন দূরে থাকেন। এই অবস্থায় নিজেরা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় খাওয়া-দাওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন। এমন অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন বোলপুরের কয়েক জন যুবক।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও করোনা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই যুবকেরাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম নয় বোলপুরের কৃষ্ণেন্দু সাউ, ঋষিকেশ চন্দ্র, অনুপম বাগদি কিংবা ঋত্বিক চন্দ্রদের। এর আগেও পুজোর সময় সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারের হাতে নতুন জামা-কাপড় তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে গত বছর লকডাউনের সময় অসহায় পরিবারগুলির হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়ার কাজ করেছিলেন কৃষ্ণেন্দুরা।
এ বছর সংক্রমণের হার গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে মধ্যেও ওই যুবকেরা বিপদের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। কাদের খাবার প্রয়োজন রয়েছে, তা জানার জন্য তাঁরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে চলেছেন। কোনও দিন কোথাও থেকে খাবার জোগাড় করে, আবার কোনও দিন নিজেদের টাকায় খাবার বানিয়ে তা করোনা আক্রান্তের হাতে তুলে দিচ্ছেন। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু সংস্থা মারফত করোনা আক্রান্ত কয়েকটি পরিবার ওই যুবকদের সঙ্গে যোগযোগ করে। এখন প্রায় প্রতিদিনই ২০-২৫টি এমন পরিবারের হাতে খাবার ও জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষ্ণেন্দুরা।
বোলপুরের গুরুপল্লির বাসিন্দা এক করোনা আক্রান্তের মেয়ে বলেন, “কয়েক দিন ধরেই আমার মা করোনায় আক্রান্ত। বাড়িতে থেকেই তার সমস্ত ধরনের চিকিৎসা চলছে। বাড়িতে আমি আর আমার মা ছাড়া কেউ নেই। দোকান বাজার যাওয়াও সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক যুবকের পোস্ট দেখে যোগাযোগ করি। তারাই আমার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়। এই ভাবে ওই যুবকেরা এগিয়ে আসায় আমরা কৃতজ্ঞ।”
কৃষ্ণেন্দু ঋষিকেশরা বলেন, “এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যাদের প্রায় সকলে আক্রান্ত। এই অবস্থায় তাঁদের দেখার, এমনকি তাঁদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতোও কেউ নেই। তাই আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে ঠিক করি, এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো দরকার। আর সেখান থেকেই এই উদ্যোগ।”