Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনে মুশকিল আসানে পাশে ‘বন্ধু পুলিশ’                    

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামেই বাড়ি সুরাইয়া বানুর। তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক।

তৎপর পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তৎপর পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ   
নানুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৩২
Share: Save:

আচমকা লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন আইসিডিএস কর্মী সুরাইয়া বানু। বিপাকে পড়েছিলেন ৭০ বছরের সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা আন্নিহার বিবিও। বন্ধু হয়ে মুশকিল আসান করে তাঁদের মুখে হাসি ফোটালেন পুলিশ কর্মীরা। মানবিকতার এই নজির রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো নানুরের নতুনগ্রাম কাজীপাড়াতেও।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামেই বাড়ি সুরাইয়া বানুর। তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক। মাস সাতেক আগে যমজ শিশুর জন্ম দেন সুরাইয়া। লকডাউনের সময় মূলত গুঁড়ো দুধই বাচ্চা দু’টির অন্যতম খাবার। কিন্তু লকডাউন চলার ফলে দোকান বাজারে গুঁড়ো দুধের আকাল চলছে। লকডাউন ঘোষণার পরদিনই সেই দুধ ফুরিয়ে যায়। চরম সমস্যায় পড়ে যান সুরাইয়া। এলাকার কোনও দোকানে ওই দুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শহরের দোকান থেকে দুধ আনানোও সম্ভব হয়নি। এরফলে যমজ সন্তানকে নিয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করতে থাকে শিশুরা। গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সেই খবর পেয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন নানুর থানার পুলিশ কর্মীরাই। মঙ্গলবার বোলপুর থেকে দু’প্যাকেট দুধ এনে সুরাইয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। দুধ খেয়ে শান্ত হয়েছে শিশুরাও। হাসি ফুটেছে মায়ের মুখে। সুরাইয়া বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বন্ধু হয়ে পাশে থাকল. সারা জীবন মনে রাখব।’’

একই ভাবে সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন ওই গ্রামেরই ৭০ বছরের সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা আন্নিহার বিবি। দীর্ঘদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। চার মেয়ে এক ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আলাদা সংসার। ছোট মেয়ে লালমিনার গ্রামেই বিয়ে হয়েছে। তিনিই মাকে দেখভাল করেন। কিন্তু তাঁদের আর্থিক অবস্থাও ভাল না। ১০ বছর ধরে ওই বৃদ্ধা কিডনি, রক্তচাপ-সহ বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন। ডাক্তারের নির্দেশে বোলপুর থেকে নিয়মিত ওষুধ আনিয়ে খেতে হয় তাঁকে। কিন্তু লকডাউনের মাঝেই তাঁর ওষুধ ফুরিয়ে যায়। তারপর চেষ্টা করেও আর ওষুধ আনানো সম্ভব হয়নি। এরফলে অসুস্থতা বেড়ে গিয়ে জীবন সংশয় দেখা দেয়। গ্রামের মানুষজন কোথায় নিয়ে যাবেন, কীভাবেই বা নিয়ে যাবেন তা নিয়ে যখন দুশ্চিন্তায় তখনও পুলিশের কাছে সেই খবর পৌঁছয়। এরপরেই এ দিন বোলপুর থেকে ওষুধ এনে তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। ওষুধ খেয়ে অনেকটা সুস্থ তিনি। মেয়ে লালমিনা বিবি বলেন, “আমরা বহু চেষ্টা করেও ওষুধ আনাতে পারিনি। পুলিশ পাশে না দাঁড়ালে মাকে হয়তো বাঁচাতেই পারতাম না।’’ পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এই রকমের সমস্যা সমাধানের জন্য 'বন্ধু পুলিশ' বলে একটি দল গড়া হয়েছে। এবার থেকে খবর পেলেই সেই দল মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE