সাগরদিঘির উপনির্বাচনে সাফল্যের পরে পঞ্চায়েতে নির্বাচনেও জোট করে লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করেছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সম্প্রতি রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিএম এবং শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও জোট করে লড়াইয়ের কথা জানান। তবে শনিবার পুরুলিয়ার জেলা পরিষদের আসনগুলিতে একক ভাবে সিপিএমের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে জেলায় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
জেলাপরিষদের ৪৫টি আসনের মধ্যে ছ’টি আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক ও বাকি ৩৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। প্রার্থী তালিকায় ৪৫ জনের মধ্যে ২২ জন মহিলা। গুরুত্বপূর্ণ মুখ বলতে জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ ইব্রাহিম। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘সমস্ত প্রার্থী গণআন্দোলনের মধ্যে থাকা নেতা ও কর্মী।”
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে বাম ও কংগ্রেস। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পরাজিত হন দীর্ঘদিনের কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বড় অংশের মত, জেলায় তৃণমূলকে হারানো ও বিরোধী পরিসর নিজেদের দখলে আনতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হলেও অন্তত আসন সমঝোতা হওয়া প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, গত পঞ্চায়েত ও দু’বছর আগে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনের পরে দুই দলের শক্তি জেলায় বাড়লেও একক ভাবে লড়াই করে শাসকদলকে বেগ দেওয়া কঠিনই। দু’দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদেরও অনেকের মত, তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে সমঝোতা করা দরকার।
আগেই কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো জানিয়েছিলেন, দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাঁরাই প্রার্থী দেবেন। আর যেখানে কংগ্রেসের সংগঠন দুর্বল, সেখানে আসন সমঝোতা হতে পারে। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দল অনমনীয় মনোভাব দেখাবে না বলে এ দিন দাবি করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। তবে পরবর্তী সময়ে যদি দেখা যায়, কোনও আসনে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি শক্তিশালী, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বামফ্রন্টের মধ্যে আলোচনা হবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপিকে হারিয়ে চোরদের হাত থেকে পঞ্চায়েতকে মুক্ত করতে নিচুতলায় মানুষের জোট হচ্ছে।” তাঁর ইঙ্গিত যে মূলত নিচুতলার জোট নিয়ে, তা এই কথায় স্পষ্ট বলে মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কটাক্ষ, “সাড়ে তিন দশক ধরে কারা পঞ্চায়েতে লুটেপুটে খেয়েছে, সব মানুষ জানেন। পুরুলিয়ায় জোট করেও লাভ হত না। জোট নিয়েও আমরা ভাবিত নই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)