Advertisement
E-Paper

দুই নেতা না মিললে ক্ষতি, মত আদিবাসীদের

পাইকা সরেন নামে পাথর খাদান এলাকার এক আদিবাসীর ঘরে ‘লুটের’ ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি আদিবাসী গাঁওতার দুই শীর্ষনেতা সুনীল সরেন ও রবীন সরেনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পিছনে কি কার্যত সেই অভিযোগই জড়িয়ে রয়েছে— তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১২

‘তোলাবাজি’র জাল ছড়িয়েছে এলাকার আদিবাসী গ্রামগুলিতে। তাতে পরোক্ষে মদত রয়েছে কয়েকটি সংগঠনের— জেলার পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় কান পাতলে এমনই অভিযোগ শোনা যায়।

পাইকা সরেন নামে পাথর খাদান এলাকার এক আদিবাসীর ঘরে ‘লুটের’ ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি আদিবাসী গাঁওতার দুই শীর্ষনেতা সুনীল সরেন ও রবীন সরেনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পিছনে কি কার্যত সেই অভিযোগই জড়িয়ে রয়েছে— তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের পাথর খাদান এলাকায় কর্মরত আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের দাবি সামনে রেখে আদিবাসী গাঁওতার উত্থান। ২০০৮ সালে সংগঠনের সূচনা হয়। ২০১০ সাল থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে সংগঠন। গাঁওতার আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল খাদান এলাকা। বন্ধ করে দেওয়া হয় একের পর এক খাদানের কাজকর্ম। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ক্র্যাশার। সেই সময় গাঁওতার দাবি ছিল, আদিবাসী এলাকাগুলিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, বাসস্থান তৈরি করতে হবে। বেশ কিছু দাবি মেনে নেয় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।

কাগজ-কলমে পাথর খাদান বন্ধ থাকায় সেই আন্দোলন এখন অনেকটাই ফিকে। এলাকাবাসী একাংশের বক্তব্য, ভবিষ্যতের কথা ভাবলে দুই নেতার দ্বন্দ্ব সংগঠনের ঐক্যকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল।

দুই নেতা যে নিজেরাও সে কথা বুঝছেন না, তেমন নয়। প্রকাশ্য একে অন্যের প্রতি বিষোদ্‌গার করলেও, দ্বন্দ্ব সরিয়ে দুই বন্ধু এক না হলে আখেরে ক্ষতি সকলের— সেটাও ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন দুই নেতাই।

গাঁওতা সূত্রে খবর, ৩০ ডিসেম্বর একটি বৈঠক ছিল সংগঠনের জেলা কার্যালয়, সিউড়ির তুলপাড়ায়। আলোচ্য বিষয় ছিল, কেন সংগঠনের মদতে আদিবাসীদের ঘরে লুটপাট হবে। সভায় উপস্থিত না থাকায় সংগঠনের সম্পাদক রবীন সরেনকে পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা নিয়েই দুই নেতা একে অনয্রে বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। দু’জনেই দাবি করছেন, তিনিই সংগঠনের নেতা। অপর জনের সঙ্গে মানুষ নেই।

সংগঠনের নেতা সুনীল সরেনের দাবি, গত বছর অগস্টে শালবাদরা এলাকায় পাইকা সরেন নামে এক আদিবাসীর ঘরে লুটপাট চলে। পাইকার অপরাধ, তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে পাথরবোঝাই ভারী যান চলাচলে বাধা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, শাস্তি দিতেই তাঁর ঘরে লুটপাট চালানো হয়। সুনীলবাবুর কথায়, ‘‘সংগঠনের তরফেই জেনেছিলাম, ওই ঘটনার পিছনে ইন্ধন ছিল রবীন সরেনের। কারণ, লুটপাটের আগে এলাকায় এ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের ওই বৈঠকে আমরা ওঁর বক্তব্য শুনতে চেয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, কেন সংগঠনের মদতে ওই আদিবাসীর ঘরে লুটপাট চলবে?’’ সুনীলবাবুর দাবি, বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সংগঠনের সম্পাদক রবীন সরেনকে। কিন্তু তিনি সেখানে আসেননি। আগেও একাধিক বার ডাক পেয়েও যাননি বৈঠকে। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকেই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুনীলবাবু বসেন, ‘‘সে দিনের সভায় ১৩টি ব্লকের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সবাই রবীনের বিপক্ষে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

রবীন সরেন অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। পাল্টা তোপ দেগেছেন সুনীলের দিকে। বরীনের কথায়, ‘‘প্রথমত, বৈঠকে ডাক পাইনি। দ্বিতীয়ত, আদিবাসীর বাড়িতে লুটের পিছনে আমার ইন্ধন থাকার অভিযোগও ঠিক নয়। ওঁর বাড়িতে লুট হয়েছে এলাকাবাসীর ক্ষোভের জন্যেই।’’ তাঁর অভিযোগ, সুনীল সরেনের নির্দেশে ওই ব্যক্তিই দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া ট্রাক ও ডাম্পার থেকে ২০০ টাকা করে তোলা আদায় করছিলেন। পাথর খাদানের মালিকেরা সুনীল সরেন ও ওই ব্যক্তিকে ১২ লক্ষ টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও তোলা আদায় বন্ধ হয়নি। তা নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছিল। ক্ষুব্ধ ছিল মাঝি হারামও। রবীনবাবু বলেন, ‘‘আমি গ্রামে বৈঠক করে তাঁকে অন্যায় কাজ বন্ধ করার কথা বোঝাতে বলেছিলাম। বাড়িতে লুটপাট চালাতে বলিনি। তবুও সেটা হয়েছে। তা না হলে হয়তো তোলা আদায় বন্ধ হতো না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘রসদে টান পড়ায় খেপে গিয়েছেন সুনীল সরেন।’’ এ নিয়ে সুনীলবাবুর পাল্টা জবাব, ‘‘কে টাকা নিয়েছে, কার নির্দেশে টাকা নেওয়া হচ্ছে সেটা তো পুলিশের দেখার কথা। অন্য এলাকায় তোলা আদায় কী ভাবে মুখ বুঝে সহ্য করছেন রবীনবাবু?’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, কাগজ-কলমে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকলেও, অনেক জায়গাতেই কাজ চলছে। দিনে প্রচুর সংখ্যায় ভারী গাড়ির যাতায়াত চলে। অভিযোগ, এক-একটি গ্রামে সে জন্য গজিয়ে উঠেছে টাকা তোলার নামে ‘টোল’-এর ব্যরিকেড। সহজে আয়ের পথ গরীব আদিবাসী পরিবারের নতুন প্রজন্মকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাবে বলে মত এলাকার মানুষের। তাঁদের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনের প্রকৃত রাস্তা ছেড়ে গাঁওতা নেতারা নিজেদের মধ্যে এ ভাবে সংঘাতে জড়ালে গোটা আদিবাসী সমাজের ক্ষতি হতে পারে।

Crime Suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy