Advertisement
E-Paper

মাঠ দাপাচ্ছে রকেট লাঙল

সিলিন্ডার আকৃতি ফুট দেড়েক লম্বা লোহার পাইপের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে লোহার ফ্রেম। আর সেটির সঙ্গেই মস্ত একটি ফাল লাগানোর বন্দোবস্ত। বাকি সব একই! যে ভাবে আদি লাঙল জোড়া যায় বলদে টানা জোয়ানে, এই নতুন লাঙলও তেমন ভাবেই কাজ করবে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ১৩:০০
রকেট: লাঙল তৈরি করছেন লোকপুরের এক কারিগর। —নিজস্ব চিত্র।

রকেট: লাঙল তৈরি করছেন লোকপুরের এক কারিগর। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ষা বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে জলভরা মেঘ, আর জল থইথই কৃষি জমির উপর হাল বলদ নিয়ে চাষির ছবি।

সেই ছবিটাকে কিছুটা বদলে নিয়ে বলতে হচ্ছে, জলভরা আকাশ, আর জোড়া বলদের সঙ্গে ‘রকেট লাঙল!’ খয়রাশোলের লোকপুর ১২-১৩টি কর্মকার পরিবার এখন ব্যস্ত সেই ‘রকেট লাঙল’ বানানোর কাজে। কাঠের লাঙলের লোহার রেপ্লিকা তো আছেই, তবে বর্তমানে চাষিদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ‘রকেট লাঙল’। কী বিশেষত্ব এই লাঙলের?

সিলিন্ডার আকৃতি ফুট দেড়েক লম্বা লোহার পাইপের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে লোহার ফ্রেম। আর সেটির সঙ্গেই মস্ত একটি ফাল লাগানোর বন্দোবস্ত। বাকি সব একই! যে ভাবে আদি লাঙল জোড়া যায় বলদে টানা জোয়ানে, এই নতুন লাঙলও তেমন ভাবেই কাজ করবে। কর্মকার পরিবারের এক কারিগরের কথায়, ‘‘প্রাচীন এই কৃষি যন্ত্র ব্যবহৃত হয় বীজ বোনা বা চারা রোওয়ার জন্য। সংক্ষেপে, জমির মাটি তৈরি করার জন্য। এর প্রধান কাজ হল মাটিকে ওলোটপালট করা এবং মাটির বড় ডেলাগুলোকে ভেঙে দেওয়া।

এতে মাটির নীচের স্তরের পুষ্টি গুণ উপরে উঠে আসে এবং মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্ট নীচে চাপা পড়ে জৈব সারে পরিণত হয়। এ ছাড়া, মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে লাঙল। চাষিদের দাবি, এই কাজটাই এখন যথেষ্ট ভালভাবে করতে পারছে রকেট হাল।

কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জমিতে চাষ দেওয়ার জন্য ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রিলার থাকতে ক’জনই চাষিই বা লাঙল ব্যবহার করেন?

অভিজ্ঞতা থেকে জেলার চাষিরা বলছেন, ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার সামনের সারিতে জায়গা করে নিলেও হাল বা লাঙল এখনও অপরিহার্য। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব খরিফ মরসুমে মোট ৩ লক্ষ হেক্টর জমির প্রায় ৪০ শতাংশ এখনও হাল দিয়েই চাষ হয়ে থাকে।

অতীতে লাঙল তৈরি করতেন কাঠের মিস্ত্রিরা। এখন সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কামারেরা। কর্মকারদের হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পরে লাঙল তৈরিতে বিবর্তন এসেছে। নজর রাখতে হয়েছে, হাল বা লাঙলের ওজন যাতে কোনও ভাবেই ৬ কেজির বেশি ভারী না হয়।

‘রকেট লাঙল’ সেই তালিকায় নবতম সংযোজন বলছেন লোকপুরের লিচু কর্মকার, অধর কর্মকার, শিবু কর্মকার এবং ননী কর্মকারদের মতো অভিজ্ঞ চাষিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রথাগত লোহার লাঙল তৈরি হচ্ছে। তবে দিন দিন রকেটের চাহিদা বাড়ছে। এ বছর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মস্ত ফালটা আনা হচ্ছে বাঁকুড়া বা ওড়িষ্যা থেকে।’’

সব মিলিয়ে দাম পড়ছে ৬০০-৬৫০ টাকা। প্রথাগত হালের থেকে কিছুটা দাম বেশি। তবে এক বার তৈরি হয়ে গেলে ফাল পাল্টাতে চাষির কামারশালে আসার প্রযোজন নেই। নিজেরাই সেটা করে নিতে পারবেন।

বীরভূমে গত দু’-তিন বছর ধরে এমন হালের চল হলেও বাঁকুড়ায় এই হালের ব্যবহার আগেই শুরু হয়েছে। নাম ‘বোস লাঙল।’ এই লাঙল আগাছা যুক্ত জমিতে চালালে খুব ভাল কাজে আসে। এই লাঙল দিয়ে চাষ করলে মাটির নীচে পুরো চাপা পড়ে যায় আগাছা, জানাচ্ছে কৃষি দফতর।

একমত চাষিরাও।

রামকৃষ্ণ মণ্ডল, বাবলু ঘোষ, রণবীর চৌধুরীরা বলছেন, ‘‘বেলে বা বেলেদোঁয়াশ মাটির জন্য সত্যিই ভাল। তবে সমস্যা একটাই এঁটেল মাটিতে এই হাল চালানো যায় না।’’

Harvest Dubrajpur Rocket Tiller দুবরাজপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy