E-Paper

পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা-ফাঁদ, চুরি লক্ষাধিক

আবার পুলিশের পরিচয় দিয়ে দু’দফায় লক্ষাধিক টাকার সাইবার প্রতারণার অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা।

ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। —প্রতীকী ছবি।

তৈরি হয়েছে সাইবার সেল। চলছে সচেতনতার প্রচার। তার পরেও সাইবার প্রতারণা থেকে বাসিন্দাদের রেহাই মিলছে না বীরভূমে। বোলপুরের পরে এ বার নানুর। আবার পুলিশের পরিচয় দিয়ে দু’দফায় লক্ষাধিক টাকার সাইবার প্রতারণার অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে কীর্ণাহারের কড়েয়া গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কড়েয়া গ্রামের এক তরুণী বেঙ্গালুরুতে এমবিএ পড়েন। ২ নভেম্বর তরুণীর মাসি করবী রায় পালের মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ‘ট্রু কলার’ অ্যাপে দেখায় নম্বরটি ‘ইন্ডিয়ান পুলিশের’। সেই ফোনে পুলিশের পরিচয় দিয়ে বলা হয়, এমবিএ পাঠরত তাঁর বোনঝি একটি হোটেলে মধুচক্রে কয়েক জনের সঙ্গে ধরা পড়েছে। তাঁকে ছাড়াতে চাইলে অনলাইনে ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তরুণীর মামা সন্ন্যাসী রায় বলেন, ‘‘আচমকা ওই কথা শুনে আমরা ঘাবড়ে যাই। বোনঝির সঙ্গে কথা বলতে চাই।’’ তিনি জানান, তখন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, এখন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলা যাবে না। সন্ন্যাসীর কথায়, ‘‘তবে ফোনে কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পাই। কান্নাটা বোনঝির বলে মনে হয়। তা ছাড়া বোনঝি এবং তার বাবার নাম ঠিকঠাক বলার পরে আর সন্দেহ হয়নি। বোনঝির ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনলাইনে টাকাটা পাঠিয়ে দিই।’’ তিনি জানান, কিছু ক্ষণ পরেই ফের ফোন করে জানানো হয়, অভিযোগ লেখানো হয়ে গিয়েছে। তাই আরও ৪৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। না হলে কিছু করা যাবে না।

সন্ন্যাসী বলেন, ‘‘আমাদের তখন উভয় সঙ্কট। তাই টাকাটা পাঠিয়ে দিই। এর পরে সন্দেহ হওয়ায় বোনঝিকে ফোন করে জানতে পারি সব মিথ্যা। সে হস্টেলেই রয়েছে। এ বার ওদের ফোন করলে বলে আরও ৮২০ টাকা পাঠালে সমস্ত টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেবে। আমি আর এক টাকাও পাঠাব না বলাতে ওরা অশ্লীল গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেয়।’’

সেপ্টেম্বরে বীরভূমেই সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মৃত্যু হয় উত্তরপ্রদেশ থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা সিংহের। একই মাসেই সিবিআই পরিচয় দিয়ে অনলাইনে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা সাইবার প্রতারণার শিকার হন শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্রী পূর্বপল্লির বাসিন্দা গায়িকা সুনিধি নায়েক। অনামিকার ক্ষেত্রে কয়েক জনে গ্রেফতার হলেও সুনিধির ঘটনার কিনারা হয়নি।

পুলিশের দাবি, বাসিন্দাদেরও আরেকটু সচেতন হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রেও যাচাই না করেই ওই ছাত্রীর পরিজন টাকা পাঠিয়ে দেন। করবী বলেন, ‘‘লোকলজ্জার কথা ভেবেই দু’দফায় অনলাইনে এক লক্ষ ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। এমন ফাঁদে পড়তে হবে ভাবিনি। সে দিনই কীর্ণাহার থানা এবং সোমবার সিউড়ি সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।’’

পুলিশ জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয় তা সিল করা হয়েছে। কিন্তু তাতে টাকা না থাকায় কিছু করা যায়নি। প্রতারকদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি টাকা ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

চলছে প্রতারণা

সাইবার প্রতারণার ফাঁদে বিশ্বভারতীর তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা সিংহের মৃত্যু।

সিবিআই পরিচয় দিয়ে অনলাইনে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার প্রতারণার শিকার গায়িকা সুনিধি নায়েক।

বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় লাভপুরের হাটতলার বাসিন্দা রাখহরি চট্টোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী সোমা চট্টোপাধ্যায়ের।

গ্যাসের ভর্তুকির কথা বলে বোলপুরের ত্রিশূলাপট্টির বাসিন্দা আবির সেন প্রতারণার শিকার।

তারাপীঠে অনলাইনে পুজো দেওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কয়েক জন প্রতারিত হন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyber Crime Fraud police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy