Advertisement
E-Paper

ডিএম অফিসের কুয়োয় লাশ মিলল পুরুলিয়ায়

সকালে অফিস খোলার পরে অন্য দিনের মতোই লোকজনের ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে। কিন্তু, কোথাও থেকে ভেসে আসছিল দুর্গন্ধ, কেউ কেউ রুমাল চাপা দিয়েও হেঁটে যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসকের অফিসের ঠিক বাইরেই ঝাঁঝালো গন্ধটা আরও তীব্র। উৎস খুঁজতে গিয়ে কুয়োর কাছে এসে বোঝা যায় গন্ধটা আসছে সেখান থেকেই। কুয়োর ঢাকনা সরাতেই গাল যেন গুলিয়ে গেল। উঁকি দিয়ে দেখা গেল, কুয়োর জলে একটি দেহ ভাসছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২০
কুয়োর ভিতর থেকে দেহ উদ্ধার করছেন দমকলের কর্মীরা। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

কুয়োর ভিতর থেকে দেহ উদ্ধার করছেন দমকলের কর্মীরা। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

সকালে অফিস খোলার পরে অন্য দিনের মতোই লোকজনের ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে। কিন্তু, কোথাও থেকে ভেসে আসছিল দুর্গন্ধ, কেউ কেউ রুমাল চাপা দিয়েও হেঁটে যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসকের অফিসের ঠিক বাইরেই ঝাঁঝালো গন্ধটা আরও তীব্র। উৎস খুঁজতে গিয়ে কুয়োর কাছে এসে বোঝা যায় গন্ধটা আসছে সেখান থেকেই। কুয়োর ঢাকনা সরাতেই গাল যেন গুলিয়ে গেল। উঁকি দিয়ে দেখা গেল, কুয়োর জলে একটি দেহ ভাসছে।

বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনা ঘিরে সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে যায় গোটা ডিএম অফিস চত্বরে। এই রিজার্ভার বা কুয়োটির অবস্থান চত্বরের পিছনের দিকে কোনও ফাঁকা জায়গায় নয়, একেবারেই মাঝামাঝি জায়গায়। এক পাশে জেলাশাসকের অফিস, অন্য দিকে অতিরিক্ত জেলাশাসকের (সাধারণ) কার্যালয়। অফিসে ঢোকার অন্যতম মূল রাস্তাও এই কুয়োর গা ঘেঁষেই। এই কুয়োর ঠিক পাশেই পার্ক করা থাকে অতিরিক্ত জেলাশাসকের গাড়ি। এই কুয়োর জলই প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কর্মীরা জানিয়েছেন, এই জল খাওয়া না হলেও মুখহাত ধোওয়া, এমনকী চায়ের কাপ-প্লেট কিংবা খাওয়ার পর টিফিন কৌটো ধোওয়া হয় এই জলেই।

সেই রিজার্ভার বা কুয়োর ভিতর লাশ ভাসছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অফিস তো বটেই, বাইরের লোকজনও ভিড় করতে শুরু করেন। মহকুমা শাসক (সদর) আশিস সাহা-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরাও বেরিয়ে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলকে। অফিসের মাঝে কুয়োর ভিতরে কী ভাবে লাশ এল এই জল্পনায় সহরগরম গোটা চত্বর। তৃণমূলপন্থী রাজ্য সরকারি একটি কর্মচারী সংগঠনের নেতা বিধানচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘সকাল থেকেই দুর্গন্ধে টেঁকা যাচ্ছিল না। যদিও কুয়োর ঢাকনা বন্ধ ছিল। ঢাকনা সরাতেই দেখি, লাশ ভাসছে। তখনই আমি জেলাশাসককে খবর দিই। উনি বাইরে ছিলেন। তার পরেই মহকুমাশাসক অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন।’’

দমকল বিভাগের লোকজন আসার পরে কুয়োয় মই লাগিয়ে জল থেকে মাঝবয়সী পুরুষের দেহ তুলে আনা হয়। উপরে তোলার পরে দেখা যায় মৃতের পরনে কোনও পোশাক নেই। শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্নও প্রাথমিক ভাবে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, দেহটিতে পচন ধরে গিয়েছে। মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। বয়স আনুমানিক ৪৫-৪৬। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। মহকুমাশাসক (সদর) বলেন, ‘‘চত্বরের মধ্যে এই কুয়োয় কী ভাবে মৃতদেহ এল, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’’ উল্লেখ্য, বছর সাতেক আগে জেলাশাসকের দফতর চত্বরের একটি জলের ট্যাঙ্কে এক শিশুর দেহ মিলেছিল।

এ বারও শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে ডিএম অফিস চত্বরের কুয়োয় দেহ মেলায় একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। অফিস চত্বরে পাহারা থাকে। যথেষ্ট আলো রয়েছে। এখানে কী ভাবে মৃতদেহ এল? কুয়োর ঢাকনা বন্ধ থাকায় কর্মীদের অনুমান, কেউ বা কারা বাইরে থেকে কুয়োয় লাশ ফেলে ঢাকনা বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি দেহটি নগ্ন হওয়ায় রহস্য বেড়েছে। তবে এই ঘটনায় জেলাশাসকের অফিস চত্বরের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। জেলাশাসক তন্ময় চত্রবর্তী বলেন, ‘‘নিরাপত্তার প্রশ্নে এই ঘটনাটি যথেষ্ট উদ্বেগের। কী ভাবে ঐ রিজার্ভারের মধ্যে দেহ এল, তার তদন্ত পুলিশ করছে। তবে আমরা অফিস চত্বরের কয়েকটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অফিস চত্বরে আপাতত পুলিশ পিকেটও রাখা হচ্ছে।’’

Dead body purulia police dm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy