Advertisement
E-Paper

ডায়েরিয়ায় মৃত্যু বাড়ছে পুরুলিয়ায়

কালীপুজোর সময় নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে বহু এলাকার জল দূষিত হয়ে পড়ে। দূষিত জল পেটে যাওয়ার পরেই গোলমালের সৃষ্টি। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের টুসুলিয়াম ও বোরো থানার কেন্দাজোড় গ্রামে অনেকেই পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বর্ষায় থাবা বসাতে পারেনি। কিন্তু হেমন্তে ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এর জেরে শনিবার সরকারি ভাবে ডায়েরিয়ায় মারা গেলেন দু’জন। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে পেটের রোগে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর ওই তিন জনের মৃত্যু কারণ ডায়েরিয়া বলে মানতে নারাজ। তবে পরপর মৃত্যু বাড়তে থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

কালীপুজোর সময় নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে বহু এলাকার জল দূষিত হয়ে পড়ে। দূষিত জল পেটে যাওয়ার পরেই গোলমালের সৃষ্টি। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের টুসুলিয়াম ও বোরো থানার কেন্দাজোড় গ্রামে অনেকেই পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শনিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে টুসুলিয়াম গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা অতিকা মুর্মু (২৬) মারা যান। ওই দিনই খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে ডায়েরিয়ায় মারা যান কেন্দাজোড় গ্রামের মাতুবালা মাহাতো (৭৫)। প্রশাসন জানিয়েছে, দুই এলাকাতেই বাসিন্দাদের জলের গাড়ি পাঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও যাচ্ছেন। টুসুলিয়ামে রবিবার মহামারী বিশেষজ্ঞ পরিদর্শনে যান। অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘ওই দুই গ্রামে স্বাস্থ্য দফতর নজর রেখেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’’

বৃহস্পতিবার রাতে নিতুড়িয়া হারমাড্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পেটের রোগে মারা যান টুসুলিয়ামের সনমনি সোরেন। শনিবার সকালে ওই গ্রামে একই উপসর্গে মারা যান অনন্ত টুডু। কেন্দ্রাজোড়াতেও চার-পাঁচ দিন আগে জগদীশ মাহাতো নামে এক যুবক একই কারণে মারা যান বলে বাসিন্দাদের দাবি। ওই মৃত্যুগুলি ডায়েরিয়া বলে স্বাস্থ্য দফতর মানতে না চাইলেও শেষ দু’জনের মৃত্যুর কারণ ডায়েরিয়া বলেই স্বীকার করা হয়েছে। অতিকা মুর্মু নামের ওই প্রসূতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রঘুনাথপুরের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে। তাঁর দেহে জল কমে আসায় পরপর পাঁচ বোতল স্যালাইন দেওয়া হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়ে পড়ায় তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও বিশেষ কিছু করা যায়নি। সেখান থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। রঘুনাথপুরের সুপার স্পেশ্যালিটির সুপার সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘ওই প্রসূতি ডায়েরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।”

এ দিকে, কেন্দাজোড় গ্রামেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কেন্দাজোড় গ্রাম থেকে তুলনায় খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল কাছে বলে সেখানেই রোগীরা চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সে কারণে ওই গ্রামে ডায়েরিয়া ছড়ানোর খবর আমরা গোড়ায়ই পাইনি। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানান। পরে খাতড়া হাসপাতালে যোগাযোগ করে ডায়েরিয়া আক্রান্তদের হিসেব পাওয়া যায়।’’ বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় অন্তত ৫০-৬০ জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত।

বিএমওএইচ (মানবাজার ২) কৌশিক ঢালি বলেন, ‘‘খাতড়ায় ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি থাকা কেন্দাজোড় গ্রামের মাতুবালা মাহাতো (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা মারা গিয়েছে। খবর নিয়ে জেনেছি বয়সজনিত কারণে ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় তিনি স্যালাইন নিতে পারছিলেন না। জগদীশ মাহাতো নামে যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, খবর নিয়ে জেনেছি তিনি ব্লাড সুগারের রোগী ছিলেন। কাজেই ডায়েরিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলা যাবে না।’’ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘ব্লাড সুগারের রোগী কি ডায়েরিয়ায় মারা যেতে পারেন না? নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতেই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দুর্বল যুক্তি খাড়া করছেন।’’

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অবশ্য ওই গ্রামে এখন স্বাস্থ্যকর্মীরা যাচ্ছেন। পাঠানো হচ্ছে জলের গাড়িও। গ্রামের পুকুর, কুয়ো এবং নলকূপ চত্বরে ব্লিচিং ও চুন ছড়ানো হচ্ছে। বিএমওএইচ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত পরামর্শ দিচ্ছেন। আমি নিজেও ওই গ্রামে গিয়েছি। জল ফুটিয়ে খাওয়া এবং পুকুরের জলে বাসনকোসন না ধোয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগ কোথা থেকে ছড়াচ্ছে এখনও বোঝা না গেলেও জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের লোকজন জলের কয়েকটি উৎস থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে গিয়েছেন।

• শনিবার টুসুলিয়ামের অনন্ত টুডু (৫৬)-এর মৃত্যু হয়। পেটের রোগে ভুগছিলেন বলে স্থানীয়দের দাবি।

মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। বয়সজনিত
কারণেও তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

সৌম্য সরকার

বিএমওএইচ (রঘুনাথপুর ১)

• সম্প্রতি কেন্দাজোড়ে মারা যান জগদীশ মাহাতো (৩৫)। স্থানীয়দের দাবি, পেটের রোগে ভুগছিলেন।

তিনি ব্লাড সুগারের রোগী ছিলেন। কাজেই
ডায়েরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলা যাবে না।

কৌশিক ঢালি

বিএমওএইচ (মানবাজার ২)

ডায়েরিয়া লুকোনোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর। এতে ক্ষতিই হচ্ছে।

বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। বিজেপির জেলা সভাপতি

Health Diarrhea Purulia ডায়েরিয়া পুরুলিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy