আনাড়ার কাছে মহুলা ফুটবল মাঠের সভা। ছবি: সঙ্গীত নাগ
বিজেপি হিংসা, বদলায় বিশ্বাস করে না দাবি করেও দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে বদলা নেওয়ার কথাই শোনা গেল। শুক্রবার পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের আনাড়ার কাছে মহুলা ফুটবল মাঠে জনসভায় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বদলা, হিংসায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু আপনারা মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন, মানুষের উপরে অত্যাচার করছেন। গণতন্ত্রকে হত্যা করতে যে ধরনের বেআইনি কাজ করছেন, তাতে আমরা বলে রাখছি ওই সব বদল ফদল নয়, লিখে রাখছি লাল কালিতে সব বদলা নেব। গুনে গুনে বদলা নেব। সুদে আসলে বদলা নেব। দিদি, ভাইপো কেউ বাদ যাবে না।”
একই সঙ্গে বিজেপির রথযাত্রা তৃণমূলের লোকজন আটকাতে গেলে তাদের শহিদ হতে হবে জানিয়েছেন তিনি। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের রথযাত্রা আটকে দেওয়া হবে বলে বলছেন। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি রথের সামনে আসবেন না। রথ থামবে না। আপনারাই শহিদ হয়ে যাবেন।” দিলীপ আরও বলেন, ‘‘আমাদের য়ে রথ বার হবে, তার পিছন পিছন কীর্তন হবে। ওটা ছুঁচোর কীর্তন। রাস্তায় কীর্তন করতে করতে কখন যায়, যখন চার জন কাঁধে কাউকে নিয়ে যায়। তৃণমূলের শবযাত্রা শুরু হয়েছে। তাই কেষ্টকে কীর্তন করতে হচ্ছে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি আদতে গুন্ডা বদমায়েশের দল, সেটা আবার প্রমাণিত হল। ওরা গো রক্ষার নাম করে গোটা দেশ জুড়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ফলে তাদের মুখে এই ধরনের কথা নতুন কিছু নয়।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলরামপুরের সভার পরেই রঘুনাথপুর মহকুমার পাড়া ব্লকে দলের রাজ্য সভাপতিকে এনে সভা করল বিজেপি। বিজেপির দাবি, এ দিন অন্তত হাজার কুড়ি লোকের সমাগম হয়েছিল। যদিও পুলিশে দাবি, ভিড় হাজার পাঁচেকের বেশি নয়।
পুরুলিয়ায় হিন্দিভাষীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নিয়েও সরব হয়েছিলেন দিলীপবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘হিন্দি ভাষীদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ও হিন্দি ভাষীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘হিন্দি ও বাংলাভাষীদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। তাহলে আপনি কেন সভা করছেন? আপনি পাহাড়ে গিয়ে গোর্খা ও বাঙালিদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছেন। আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে ঝগড়া লাগাচ্ছেন। আদিবাসীদের ভড়কাচ্ছেন। আর পুরুলিয়ায় এসে হিন্দিভাষীদের নিয়ে বৈঠক করে বাংলা ও হিন্দিভাষীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন।” উন্নয়নের প্রশ্নে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে ও বোর্ড গঠনে শাসকদল তৃণমূল সারা জেলায় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে অভিযোগ তুলে তারই প্রতিবাদে এ দিন পাড়ায় ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ শীর্ষক সভা করে বিজেপি। সভার জায়গা নির্বাচন তাৎপর্য বলে দাবি করছেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতলেও পুলিশ, প্রশাসনের সাহায্যে অগণতান্ত্রিক ভাবে সমিতিতে বোর্ড গড়েছে তৃণমূল। সাতটি পঞ্চায়েতে বিরোধী দলের সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জেতায় সেখানে বোর্ড গঠন তৃণমূলের নির্দেশে স্থগিত করে দিয়েছে প্রশাসন। জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পাড়ায় গণতন্ত্রকে খুন করেছে তৃণমূল। তারই প্রতিবাদে আমরা এ দিন এখানে গণতন্ত্রকে বাঁচানোর লক্ষ্যে সভা করেছি।”
তৃণমূলের জনসমর্থন ক্রমশ কমছে বলে দাবি করেছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন সাংসদ নরহরি মাহাতো। তাঁর দাবি, ‘‘আসানসোল, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম থেকে লোক এনে বলরামপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করা হয়েছে। পুরুলিয়ার লোক খুবই কম ছিল।’’ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনাড়ায় রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুর্নবাসন প্রকল্প গড়ার ঘোষণা করেছিলেন। এখনও তা হয়নি। সেই প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করেন দিলীপবাবু। একই ভাবে বাম আমলে রঘুনাথপুর এলাকায় শিল্পায়নের জন্য নেওয়া জমিতে তৃণমূল সরকার কারখানা গড়তে ব্যর্থ বলেও তিনি সরব হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy