Advertisement
E-Paper

হতাশা থেকে জেদ আনো: জেলাশাসক

সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সাফল্য মিলবে কী ভাবে, তা নিয়ে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে এই কর্মশালার আয়োজন করে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
মনোযোগ: বাঁকুড়া রবীন্দ্রভবনে সরকারি চাকরির কর্মপ্রার্থীদের কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র

মনোযোগ: বাঁকুড়া রবীন্দ্রভবনে সরকারি চাকরির কর্মপ্রার্থীদের কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা কঠিন। অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কাও তাই প্রবল। তা সত্ত্বেও অনেকেই সফল হচ্ছেন। দক্ষ হাতে প্রশাসনও সামলাচ্ছেন।

নিজেদের পরীক্ষা প্রস্তুতির দিনগুলোর হতাশা-উচ্ছ্বাসের নানা ঘটনা তুলে ধরে যুব প্রজন্মকে প্রশাসনিক চাকরিতে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করলেন বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার-সহ বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মুখ থেকে সরাসরি সরকারি চাকরির প্রস্তুতির টিপস পেয়ে আত্মবিশ্বাসও বাড়ল অনেকের।

সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সাফল্য মিলবে কী ভাবে, তা নিয়ে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে এই কর্মশালার আয়োজন করে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে কলেজ পড়ুয়া ও কলেজ উত্তীর্ণ প্রায় চারশো ছেলেমেয়ে যোগ দিয়েছিলেন। কী ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সিলেবাস, কোন বিষয়কে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত— এই সব বিষয়কে নিয়ে যেমন কর্মশালায় আলোচনায় হয়েছে, পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের হাতে একটি সিডিও (কমপ্যাক্ট ডিস্ক)তুলে দিয়েছে প্রশাসন। তাতে সরকারি পরীক্ষার জন্য দরকারি নোটস রয়েছে।

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, “বারাসাতের একটি কলেজে আমি অধ্যাপনার চাকরি পেয়েছিলাম। তবে আমার স্বপ্ন ছিল আইএএস হওয়া। আমি নিজে কলা বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। লোকজনকে আমার স্বপ্নের কথা বলতে লজ্জা লাগত। কারণ অনেকেই হয়তো ভেবে বসবেন, আমার দ্বারা ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়।” তবে নিজের স্বপ্নকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে কোনও কসুর করেননি।

মৌমিতাদেবী বলেন, “প্রথম দু’বার পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপেই আমি অকৃতকার্য হয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার লজ্জায় বের হতে পারিনি। সাত দিন কিছু মুখেও তুলতে পারিনি। হস্টেলের ঘরে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দি করে রেখেছিলাম। তবে আইএএস হওয়ার জেদ আরও বেড়ে গিয়েছিল আমার।” অবশেষ তৃতীয়বারের পরীক্ষায় মেলে সাফল্য। ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলেন, “কেউ নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকলে সাফল্য মিলবেই। ‘হবে না’— ভাবাটাই পরাজয়।” ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তথ্য হাতড়ে বেড়ানোর চেয়ে সাফল্যের জন্য বইমুখো হওয়ার পরামর্শ দেন মৌমিতাদেবী।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার পরামর্শ, “পড়াশোনার পাশাপাশি দৈনিক খবরের কাগজ পড়লে বা টিভিতে খবর দেখলে সাধারণ জ্ঞান অনেকটাই বাড়ে। সফল মানুষদের সাক্ষাৎকার পড়ুন। দেখবেন তাঁদের মধ্যে কারও সফল হওয়ার পন্থা হয়তো আপনার ক্ষেত্রেও খেটে যেতে পারে।”

বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমা পুলিশের উদ্যোগে ইতিপূর্বেই সরকারি চাকরির পরীক্ষার কোচিং সেন্টার শুরু করেছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। সুখেন্দুবাবু বলেন, “আপনারা ওই কোচিং সেন্টারে যে কোনও সাহায্যের জন্য যেতে পারেন। এ ছাড়া বাঁকুড়ায় আমাদের কাছেও আসতে পারেন, কিছু জানার থাকলে।” কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভুমি সংস্কার) সব্যসাচী সরকার, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অঞ্জন চক্রবর্তী-সহ অনেকে।

কর্মশালায় যোগ দেওয়া সদ্য বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হওয়া ওন্দার রতনপুরের প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, “পরীক্ষায় সফল হব কি না তা নিয়ে একটা ভয় থেকেই যায়। জেলাশাসকের লড়াইয়ের কথা শুনে দৃষ্টিভঙ্গীটাই বদলে গেল। এখানে এসে বুঝতে পারছি, একবারে না হলেও সঠিক পদ্ধতিতে চেষ্টা করে গেলে ঠিক পারব।”

কলেজ পাশ করে ডব্লিউবিসিএস-এ বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বড়জোড়ার থানা পাড়ার সূর্য ডাঙর। এ দিনের কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সূর্যের কথায়, “পরীক্ষার জন্য কী ভাবে পড়াশোনা করা উচিত, তার একটা সুনির্দিষ্ট রাস্তা দেখিয়েছেন আধিকারিকেরা। এই ধরনের পরীক্ষায় বসতে গেলে বিজ্ঞান থেকে অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল সবেতেই জ্ঞান থাকা দরকার। কোন বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেটা জানতে পারলাম এখানে এসে।”

কেবল কর্মশালা করেই খান্ত হতে নারাজ বাঁকুড়া প্রশাসন। বাঁকুড়ার সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়াদের মধ্যে এই কর্মশালায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এটা বোঝাই যাচ্ছে, এই জেলার বহু ছেলেমেয়েই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বাইরেও ভাবছেন। ওদের জন্য আগামী দিনে আর কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে ভাবছি।”

DM Workshop Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy