Advertisement
E-Paper

ঘুরে দাঁড়ানোই জীবন! দুঃস্থ ছাত্রকে নিজের ফেরিওয়ালা অতীতের কথা শোনালেন পুরুলিয়ার ডিএসপি

আনন্দবাজার অনলাইনে মিঠুনের খবর প্রকাশের পর ছাত্রের সঙ্গে দেখা করেন পুরুলিয়ার ডিএসপি ( ডি ই বি) সমীর অধিকারী। কী ভাবে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বপ্নকে ধাওয়া করতে হয়, সেই বীজমন্ত্র দেন।

সমীরণ পাণ্ডে

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৪৬
মিঠুনের পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাসও দিলেন আবার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্রও দিলেন সমীর অধিকারী।

মিঠুনের পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাসও দিলেন আবার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্রও দিলেন সমীর অধিকারী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অভাবের তাড়নায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মিঠুন দাস স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে ঢোল, খোল ইত্যাদি তৈরি করছে। আনন্দবাজার অনলাইনে ওই খবর প্রকাশের পরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সমীর অধিকারী। তিনি এই মুহূর্তে পুরুলিয়া জেলাপুলিশের ডিএসপি (ডিইবি) পদে রয়েছেন। ওই তরুণকে সাহায্যের আশ্বাসের পাশাপাশি নিজের সাফল্যের বীজমন্ত্রও মিঠুনকে শোনান সমীর। কী ভাবে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বপ্নকে ধাওয়া করতে হয়, সে ‘শিক্ষা’ও দিয়েছেন।

নিজের অতীত কখনও এ ভাবে প্রকাশ্যে আনেননি সমীর। কিন্তু মিঠুনের সঙ্গে দেখা করে চকিতে যেন পুরনোবেলায় ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। মিঠুনকে বোঝান, অভাবের সময় অভিযোগ নয়, লড়াই করতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে যে কাহিনি তিনি শোনালেন তাতে অনুপ্রাণিত হবে অনেক মিঠুন। সমীরের সেই লড়াইয়ের গল্প শুনল আনন্দবাজার অনলাইনও।

মিঠুন জানিয়েছেন, সমীর তাঁকে বলেছেন, অর্থাভাব আর দারিদ্র ছিল তাঁদের পরিবারে। কিন্তু সে সব নিয়ে কখনও আক্ষেপ করেননি। ছোটবেলা আর পাঁচটা সমবয়সি যখন খেলার মাঠে, তখন তিনি পসরা নিয়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন বাড়ি বাড়ি। জানতেন লড়াই করতে। সংসারে বাড়তি কিছু সাহায্যের জন্য ছোট্ট পায়ে এক সময় মুড়ি বিক্রি করে বেড়িয়েছেন। সেই ‘ফেরিওয়ালা ছেলে’ই এক দিন ডব্লিউবিসিএসে চাকরি পেয়ে রাজ্য পুলিশের কর্তা।

সমীরের বাবা পেশায় ফেরিওয়ালা ছিলেন। নদিয়ার ধানতলায় অভাবের সংসার। স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হত। পাঁচ সন্তানের মধ্যে বাড়ির একমাত্র ছেলে সমীর। পরিবারের হাল ধরতে ছোটবেলাতেই উপার্জনের চেষ্টা করতেন। মা মুড়ি ভাজতেন। আর ছোট্ট সমীর সেই মুড়ি নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ফেরি করতেন। তাতে আর ক’টাকা আসে! তাই কখনও চুড়ি, কখনও ফুলের মালা বিক্রি করেছেন বাজারে। তার পর বাড়ি ফিরে পড়াশোনা। এ ভাবেই কোনও রকমে বেঁচে থাকা। তবে স্বপ্ন দেখার অভ্যাস ছাড়েননি।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন সমীর। জীবন-সফর নিয়ে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘২০০০ সালে আমাদের ওখানে বন্যা হয়েছিল। তখন বাড়ির পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে বাধ্য হয়ে আমাকে কখনও মুড়ি বিক্রি করতে হত। কখনও চুড়ি-মালা ইত্যাদি নিয়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়তাম।’’

এ ভাবেই নদিয়ার ধানতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন সমীর। তাহেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন চাকদহ কলেজে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। চাকরিজীবন শুরু প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। ২০১১ সালে নবদ্বীপ এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন সমীর। তবে এখানেই থামেননি। অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন।

শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে এর পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন-১ জয়েন্ট বিডিও পদে যোগ দেন সমীর। ৪ বছর ওই পদে ছিলেন। এর পর আবার পরীক্ষা দিয়ে ২০১৬ সালে পুলিশের চাকরি। প্রথম পোস্টিং পশ্চিম মেদিনীপুরে ডিএসপি ট্র্যাফিক। পরে ডেবরার এসডিপিও। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরুলিয়া জেলায় ডিএসপি (ডিইবি) পদে যোগ দেন সমীর।

সমীর বিশ্বাস করেন দারিদ্র, অভাবকে জয় করে জীবনে সফল হতে গেলে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা। তাঁর নিজের কথায়, ‘‘পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না।’’

সমীরের কথা শুনে মনে জোর পাচ্ছে মিঠুনও। তার কথায়, ‘‘ওঁর অতীত-কথা শুনে ভরসা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমিও পারব!’’

Purulia Police Inspirational story WB Police Inspirational
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy