Advertisement
E-Paper

ভরসাই সম্বল আঞ্জিরাদের

নিজস্ব তহবিল থেকে থেকে প্রকল্প গড়ে এমন সহায় সম্বলহীন মানুষেদের পাশে দাঁড়িয়েছে দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতি। প্রকল্পের নাম ভরসা। প্রতি মাসে ওই সব অসহায় মানুষের অ্যাকাউন্টে ৫০০টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সমিতি। গোটা ব্লক এলাকার ৩২ জনকে চিহ্নিত করে শুরু হয়েছে কাজ।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০১:২৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দুবরাজপুরের মঙ্গলপুর গ্রামের গোসাইদাসী সূত্রধর। বয়স ৭০। দেখার কেউ নেই। পেট চালানোর একমাত্র উপায়, অশক্ত শরীরে ভিক্ষা করা।

আরও করুণ অবস্থা পক্ষাঘাতে দুবরাজপুরের খোঁজকমলপুর গ্রামের দুলাল বাউরির। পক্ষাঘাতে শরীরের একদিক অবশ হয়ে গিয়েছে। সন্তান থাকলেও ৭০ ছুঁইছুই বৃদ্ধকে দেখে না কেউ। পড়শির দয়ায় পেট চলে। একই ব্লকের হাজরাপুর গ্রামের বৃদ্ধা আঞ্জিরা বিবির ও প্রায় একই হাল। স্বামীর মৃত্যুর পরে সন্তানরা না দেখায় কার্যত নিঃসহায় তিনি। খুব কষ্টকর ছিল দিনাতিপাত। গোসাইদাসী, দুলাল বা আঞ্জিরা বিবিরা শুধু অসহায় নন, নানা ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। কিন্তু দিন কয়েক আগে থেকে তাঁরা আশার অলো দেখছেন। সৌজন্যে দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতি।

নিজস্ব তহবিল থেকে থেকে প্রকল্প গড়ে এমন সহায় সম্বলহীন মানুষেদের পাশে দাঁড়িয়েছে দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতি। প্রকল্পের নাম ভরসা। প্রতি মাসে ওই সব অসহায় মানুষের অ্যাকাউন্টে ৫০০টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সমিতি। গোটা ব্লক এলাকার ৩২ জনকে চিহ্নিত করে শুরু হয়েছে কাজ। দুবরাজপুর ব্লকপ্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির এই ভূমিকায় দু’ হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন সহায় সম্বলহীন উপভেক্তারা।

কীভাবে এল এমন ভাবনা?

দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী তনুশ্রী ঘোষ এবং সহসভাপতি রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘অভিজ্ঞাতা থেকে দেখেছি, সাহায্যের জন্য প্রায়ই এমন অনেক মানুষ আসেন, যাঁরা সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অথচ ইচ্ছে থাকলেও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আসলে ওঁদের ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু সূচক। তখনই ওঁদের মতো অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা মাথায়
আসে।’’ ঠিক হয়, পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব আয়ের যে তহবিল রয়েছে সেখান থেকেই যদি কিছু করা যায় ওঁদের জন্য। বিডিও বনমালি রায়ের সঙ্গে আলোচনায় স্থির হয় ভরসা প্রকল্পের রূপরেখা।

সমিতির খাদ্য কর্মাধক্ষ্য কাশেমূল হক বলছেন, ‘‘মোট ২৯জন সদস্যকে তাঁর এলাকায় এমন সম্বলহীন মানুষের খোঁজ করতে বলা হয়েছিল। ৩২জনের সন্ধান আপাত পাওয়া গিয়েছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে অসুবিধা কোথায় উপভোক্তাদের? পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা জানাচ্ছেন, ধরা যাক, তাঁর নামটি বিপিএল তালিকাভূক্ত নয়। অথবা আর্থসামাজিক বা জাতিগত সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্যে তাঁর প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে বিবেচিত হয়নি। কারও বা ডিজিটাল রেশন কার্ড অন্য শ্রেণিভুক্ত হয়ে পড়েছে। তাই তিনি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাননি। আবার বার্ধক্যজনিত কারণের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের কাজ পেলেও তা করতে পারছেন না।

সমিতির কাজে খুশি হয়ে গোসাইদাসী, আঞ্জিরা, শেখ জোহাদ, দুলাল রুজরা বলছেন, অনেক উপকার হল। বহুবার দরবার করেছি। মাস মাসে পাওয়া টাকায় দু’বেলা খাবার তো জুটবে। এটাই বড় পাওনা।

বিডিও বনমালি রায় বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক রকমের খরচ হয়ে থাকে। সেখান থেকে খরচ বাঁচিয়েই অনেক পঞ্চায়েত সমিতি নানা উদ্যোগ নেয়। তবে দুবরাজপুর সমিতির ‘ভরসা’ প্রকল্প জেলায় প্রথম।’’

Miserable Dubrajpur Dubrajpur Panchayat Samity দুবরাজপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy