Advertisement
E-Paper

‘সন্ন্যাসী’দুধকে ডাক বিজেপি-র

বিধানসভা ২০১৬-র ভোট-সমরে ‘প্রত্যাবর্তন’ হতে চলেছে রাজ্য বিজেপি-র পরিচিত মুখ দুধকুমার মণ্ডলের। ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ ভেঙে বীরভূমে দলের প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন দুধকুমার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:২৯

এ যেন সন্ন্যাসীর মানভঞ্জন!

বিধানসভা ২০১৬-র ভোট-সমরে ‘প্রত্যাবর্তন’ হতে চলেছে রাজ্য বিজেপি-র পরিচিত মুখ দুধকুমার মণ্ডলের। ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ ভেঙে বীরভূমে দলের প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন দুধকুমার। ২৪ ঘণ্টা আগেই সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বুধবার সেই খবরের সত্যতা মেনে নিয়েছেন ওই দাপুটে নেতাও। প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পিছনে দুধকুমার নিজে বলছেন, ‘‘কিছু নেতার কার্যকলাপ দেখে ভাল লাগেনি। তাই রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়েছিলাম। তা বলে দলের প্রতি আমার যে ভালবাসা, দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা থেকে দূরে সরে আসিনি। নেতৃত্ব দলের সঙ্কটে আমার গুরুত্বের কথা বুঝিয়েছে। সব দিক ভেবে আমি লড়তে রাজি হয়েছি।’’

ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের পরে বীরভূমের পাড়ুইকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে উঠে আসছিল বিজেপি। সে সময়ে তৃণমূলের দাপুটে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে দেখা গিয়েছিল এই দুধকুমারকেই। রাতারাতি জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্য রাজনীতিতেও আলোচিত হতে থাকে বীরভূমের এই বিজেপি নেতার নাম। দুধকুমার অনুগামীদের বক্তব্য, ‘‘ক্রমবর্ধমান এই জনপ্রিয়তাই রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে দুধদার সঙ্ঘাতকে অনিবার্য করেছিল। তা ছাড়া দুধদার তৃণমূলের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার মতো কিছু মন্তব্যেও নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়।’’ আর তারই জেরে জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের (বিশেষ করে তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ) সঙ্গে তাঁর তীব্র সঙ্ঘাত শুরু হয় বলে দলীয় সূত্রের খবর। কয়েক মাসের মধ্যেই পুরভোটের সময়ে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নাটকীয় প্রস্থান দুধকুমারের।

সমীকরণটা বদলাতে শুরু করে রাহুলের জায়গায় দিলীপবাবু বিজেপি রাজ্য সভাপতির পদে আসার পরে। জেলা সভাপতির পদ ফিরে না পেলেও বিভিন্ন সময়ে বীরভূমে এসে দুধকুমার নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন শীর্ষ নেতারা। গত ১৮ ডিসেম্বর সিউড়িতে রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপবাবু এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলের আইন অমান্য কর্মসূচিতে তৎকালীন জেলা সভাপতি অর্জুন সাহার বদলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় দুধকুমারকেই। সেখানে ‘শের-দিল’ (সিংহহৃদয়) কর্মকর্তা বলে দুধকুমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিজয়বর্গীয়। আবার দুধকুমারের অভিজ্ঞতাকে দলের কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন দিলীপবাবুও। তার পরেও গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বার জেলা সভাপতি বদলের সময়েও গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদ না পেয়ে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ ঘোষণা করেছিলেন অভিমানী দুধকুমার। তার পর থেকে দলীয় কর্মসূচি থেকে সরিয়েই রেখেছিলেন তিনি।

কী ঘটল, যাতে সরাসরি প্রার্থীই হতে রাজি হয়ে গেলেন দুধকুমার?

বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশই চান বীরভূমে দুধকুমাকে মুখ করেই ভোটে লড়তে। সেই সূত্রেই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারির আগে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে রূপাকে আসতে দেখা গিয়েছিল দুধকুমারের বাড়িতে। দুধকুমার ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলছেন, ‘‘সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কলকাতায় আসার জন্য দুধদাকে বলে। দাদা যেতে রাজি ছিলেন না। শেষমেশ রূপাদিই ফোন করে মান ভাঙান। কলকাতা থেকে আসার গাড়ির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়।’’ মঙ্গলবার সকালেই কলকাতার একটি হোটেলে পৌঁছে নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুধকুমার। সেখানেই তাঁকে ভোটে লড়ার অনুরোধ করা হয়। প্রাথমিক ভাবে অস্বীকার করলেও পরে রাজি হয়ে যান দুধকুমার। তাঁর নিজের বক্তব্য, জেলায় দলের একাংশ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ময়ূরেশ্বরে (অতীতে দুধকুমার এখানেই প্রার্থী হয়েছেন) এক জন সেলিব্রিটি প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। তার পরেই হঠাৎ লকেট চট্টোপাধ্যায় তাঁর কাছে জানতে চান, ময়ূরেশ্বরে তিনি (লকেট) প্রার্থী হলে কেমন হবে। ‘‘আমি বলেছিলাম, কোনও অসুবিধা নেই। আমার সাধ্যমতো নিচুতলায় ওঁর জন্য ভোটে খাটব। মঙ্গলবার সে কথাই আমি নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা প্রসঙ্গ এড়িয়ে আমাকে ভোটে লড়া নিয়ে কথা বলেন। দলের নির্দেশ মেনে আমি সম্মত হয়েছি, এটুকুই বলব,’’—দাবি দুধকুমারের। যেখানেই দায়িত্ব দেওয়া হোক, সেখানেই লড়বেন বলে জানিয়েছেন দুধকুমার।

যদিও এ দিন পর্যন্ত দুধকুমারের ভোটে লড়ার কোনও খবর নেই জেলা বিজেপি-র কাছে। দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘এমন কোনও খবর জানি না। তবে দল এই সিদ্ধান্ত নিলে, তা না মানার কোনও কারণ নেই।’’ ‘না মানা’র কথা প্রসঙ্গেই উঠে আসছে দাপুটে দুধকুমারের সঙ্গে দলের ক্ষমতাসীন জেলা নেতৃত্বের একটা বড় অংশের বিরোধের গল্প। দুধকুমারের ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত এক নেতার দাবি, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের দু’চার জন নেতা মনে করছেন, রাজ্যে একটি আসনেও যদি দল জেতে, তা জেতাবেন দুধকুমার মণ্ডলই। এই মুহূর্তে সেই ভাবনার কোনও বাস্তবতা নেই।’’ নিজের ‘ক্যারিশমা’য় জিতে দেখান— দুধকুমারের দিকে এমন চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিচ্ছেন ওই বিক্ষুব্ধরা।

কলকাতা থেকে ফিরেই কিন্তু লড়াই শুরু করে দিয়েছেন দুধকুমার।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy