Advertisement
E-Paper

ঘরে অভাব, তবু পোশাক বিলোন সাঁইথিয়ার দীনেশ

সাঁইথিয়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা ৬২ বছরের দীনেশবাবুর আদি বাড়ি লাভপুরের দাঁড়কা গ্রামে। টিউশানি পড়ানোর জন্যেই দীর্ঘ দিন আগে সাঁইথিয়ায় বসবাস শুরু করেন।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৩
দরদি: ফি পুজোয় এমন করেই নতুন জামা-কাপড় বিলোতে দেখা যায় প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

দরদি: ফি পুজোয় এমন করেই নতুন জামা-কাপড় বিলোতে দেখা যায় প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

অর্থের অভাবে অধিকাংশ বছর পুজোয় নিজের সন্তানের জামা-প্যান্ট কিনতে পেরিয়ে যায় অষ্টমী-নবমী। তবু ৩০ বছর ধরে টিউশনির টাকা জমিয়ে অন্যের সন্তানের পোশাক জুগিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন দীনেশ ঠাকুর। আজ সংসারের হাল কিছুটা হলেও ফিরেছে। কিন্তু, প্রথার অন্যথা হয়নি আজও।

সাঁইথিয়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা ৬২ বছরের দীনেশবাবুর আদি বাড়ি লাভপুরের দাঁড়কা গ্রামে। টিউশানি পড়ানোর জন্যেই দীর্ঘ দিন আগে সাঁইথিয়ায় বসবাস শুরু করেন। টিউশানির উপরে নির্ভর করে চলত দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনা সহ চার সদস্যের সংসার। এক সময় ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে দেখা দেয় অভাব।
পরিস্থিতি সামাল দিতে টিউশানির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করতে শুরু করেন। তখনই নজরে আসে পুজোয় জামা-প্যান্ট না পাওয়ায় ছেলেমেয়েদের করুণ মুখ। চোখ এড়ায় না ছেলেমেয়েকে জামা-প্যান্ট কিনে দিতে না পারা বাবা-মায়েদের অক্ষমতার জ্বালাও।

তখন থেকেই কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। সারা বছর কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে রেখে পুজোর আগে বিভিন্ন মাপের জামা-প্যান্ট কিনে নিয়ে চলে যান লাভপুরের নাওতারা, বাবুইডাঙা প্রভৃতি গ্রামে। আদিবাসী-তফসিলি অধ্যুসিত ওই এলাকায় এক সময় সামান্য জমি-জায়গা ছিল। সেই সুবাদে ওই এলাকার জীবনযন্ত্রণা খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তাই ৩০ বছর ধরে পুজোর মুখে জামা-প্যান্ট নিয়ে পৌঁছে যান। এখন আর শুধু ছোটদের জামা-প্যান্ট নয়, প্রায় সমস্ত বয়েসের দুঃস্থদের হাতে তুলে দেন পোশাক।

পুজো এলেই দীনেশবাবুর প্রতীক্ষায় থাকেন গ্রামবাসী। নাওতারার চণ্ডী মুর্মু, গণেশ মুর্মু, বাবুইডাঙার হিমালয় মাড্ডিরা বলেন, ‘‘এখন আর আমাদের ছেলেমেয়েদের পুজোয় পুরনো জামাপ্যান্ট পড়তে হয় না। দীনেশবাবু ঠিক পৌঁছে যান।’’

এখন আর সেই দু’র্দিনও নেই। ছেলে সোমরাজ প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। মেয়ে শর্মিষ্ঠার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, অভাবের সেই দিনগুলো আজও চোখের সামনে ভাসে। ছেলেমেয়েরা বলে, ‘‘তখন বাবা আমাদের কমদামি জামাপ্যান্ট কিনে পরের ছেলেমেয়ের জন্য জামাপ্যান্ট কিনতেন। খুব অভিমান হত। এখন বাবার জন্য গর্ব হয়। আমরাও পোশাক দিতে যাই।’’

স্ত্রী স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘সে সময় পুজোয় কাপড় বিক্রি করে ১০০০ টাকা লাভ হলে উনি নিজেদের জন্য অর্ধেক খরচ করে বাকিটা দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য জামাপ্যান্ট কিনতেন। সে জন্যই হয়তো আজ ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন।’’ আর দীনেশবাবু বলছেন, ‘‘যতটুকু পেরেছি করেছি। আগামী দিনেও করব। এটা আর এমন কি?’’

Dinesh Thakur Clothes Distribution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy