Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Coal Mine

Open coal mines: বড়জোড়া খোলামুখ কয়লাখনিতে নিয়মিত বিস্ফোরণ, প্রভাব খতিয়ে দেখতে গ্রামে বিশেষজ্ঞ দল

মনোহর গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত রায় বলেন, ‘‘খনিতে জমি চলে গেছে। চাকরি মেলেনি। ফলে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আজ বেকার। তার উপর দিনরাত বিস্ফোরণের আতঙ্ক তাড়া করে আমাদের। কয়লাখনিতে বিস্ফোরণ হলেই বাড়ি কাঁপতে থাকে। যে কোনও সময় বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে... আশঙ্কায় জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি।’’

ভাইব্রোমিটারে কম্পনের মাত্রা পরীক্ষা করছেন বিশেষজ্ঞরা

ভাইব্রোমিটারে কম্পনের মাত্রা পরীক্ষা করছেন বিশেষজ্ঞরা নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৩০
Share: Save:

প্রতিদিন নিয়ম করে গ্রাম লাগোয়া খোলামুখ কয়লাখনিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেই বিস্ফোরণের জেরে কখনো গ্রাম লাগোয়া এলাকায় উড়ে আসে পাথরের টুকরো, তো কখনও কম্পনে বাড়ির ছাদ থেকে খসে পড়ে চাঙড়। নিয়মিত বিস্ফোরণে অধিকাংশ বাড়ির দেওয়াল ফেটে চৌচির। খনিগর্ভে জমি চলে যাওয়ায় জীবিকা হারিয়েছেন অনেকে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের মনোহর গ্রামের ২৬০ টি পরিবারের এখন সঙ্গী শুধুই আতঙ্ক।

বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের বাগুলি ও মনোহর গ্রাম লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় ২০০৬ সালে খোলামুখ কয়লাখনি খননের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে বড়জোড়া উত্তর খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্পের কয়লা উত্তোলনের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্যের পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (পিডিসিএল) নামের সংস্থা। এক সময় এই খোলামুখ খনি মনোহর গ্রাম থেকে বেশ দূরে থাকলেও ধীরে ধীরে তা এগিয়ে এসেছে একেবারে গ্রামের কাছে। বর্তমানে গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বসতি থেকে খনির দূরত্ব একশো মিটারেরও কম। এ ভাবে খোলামুখ খনি গ্রামের দিকে এগিয়ে আসায় প্রমাদ গুনছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মনোহর গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত রায় বলেন, ‘‘খনিতে জমি চলে গেছে। চাকরি মেলেনি। ফলে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আজ বেকার। তার উপর দিনরাত বিস্ফোরণের আতঙ্ক তাড়া করে আমাদের। কয়লাখনিতে বিস্ফোরণ হলেই বাড়ি কাঁপতে থাকে। যে কোনও সময় বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে... আশঙ্কায় জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ বাউরির কথায়, ‘‘আমাদের একমাত্র সমাধান পুনর্বাসন। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন কর্ণপাতই করেনি। খনি কর্তৃপক্ষও নির্বিকার। এই অবস্থায় আমরা অসহায়ের মতো আতঙ্কের প্রহর গুনে চলেছি।’’

খনিগর্ভে বিস্ফোরণের মুহূর্ত

খনিগর্ভে বিস্ফোরণের মুহূর্ত নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি ওই খোলামুখ খনিতে বিস্ফোরণের কী প্রভাব পড়ছে তা বুঝতে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরীক্ষা-নিরিক্ষা শুরু করেন খড়্পুগর আইআইটি ও ধানবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস-এর একদল বিশেষজ্ঞ। খোলামুখ খনির বিভিন্ন প্রান্তে ভাইব্রোমিটার যন্ত্র বসিয়ে বিস্ফোরণে কম্পনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এই বিশেষজ্ঞ দলে থাকা ধানবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস-এর সিনিয়ার টেকনিক্যাল আধিকারিক নারায়ণ কুমার বলেন, ‘‘আমরা খনিগর্ভে পর পর দু’দিনে মোট ১২ বার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখার চেষ্টা করছি, গ্রাম-লাগোয়া এলাকায় কম্পনের মাত্রা কেমন থাকছে। সমস্ত তথ্য সংগ্রহ ও তা যাচাই করে আমরা উত্তোলনকারী সংস্থাকে রিপোর্ট দেব। আগামী দিনে কয়লাখনির বিস্ফোরণে যাতে স্থানীয়দের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে উত্তোলনকারী সংস্থাকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া হবে।’’

পিডিসিএল-এর এক আধিকারিক নিজের নাম জানাতে না চাইলেও তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রকল্পের সমস্ত নিয়ম মেনেই এই খোলামুখ খনিতে কয়লা উত্তোলনের কাজ চলছে। খনিগর্ভে নির্দিষ্ট মাত্রাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খনিগর্ভের বিস্ফোরণের প্রভাবে মনোহর গ্রামে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। তার পরও গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Mine bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE