Advertisement
E-Paper

দেড় বছর নিখোঁজ, বাড়ি ফেরাল ফেসবুক

এক দিন ক্যান্টিনের কর্মীরা দেখেন, প্রৌঢ়ার পা-টা ফোলা। খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। কী হয়েছে? বলতে পারেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। ক্যান্টিনের কর্মীরাই হাসপাতালে নিয়ে যান।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৪
ক্যান্টিনের কর্মীদের সঙ্গে বাসন্তী। নিজস্ব চিত্র

ক্যান্টিনের কর্মীদের সঙ্গে বাসন্তী। নিজস্ব চিত্র

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেরই চোখে পড়ে হারানোপ্রাপ্তি নিরুদ্দেশের পোস্টগুলি। অনেকে শেয়ার করেন। কিন্তু সেই সূত্র ধরে কেউ কি ফেরে ঘরে?

ফেরে। এই তো রবিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে দাদার হাত ধরে বাড়ি ফিরে গেলেন বীরভূমের তারাপীঠ থানার নারায়ণপুর গ্রামের প্রৌঢ়া বাসন্তী সাহা।

মানসিক ভারসাম্যহীন বাসন্তীর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন পরিবারের সবাই। এক বছর চার মাস। কোনও দিশা নেই। মেয়ের ঘরে ফেরার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে শুক্রবার হঠাৎ ফেসবুকে চোখে পড়ে ছবিটা। জানতে পারেন, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে আছে সে।

কী ভাবে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছলেন বাসন্তী, সে কথা জানা যাচ্ছে না। হপ্তা দুয়েক আগে হাসপাতালের ক্যান্টিনের কর্মীরা তাঁকে বাইরে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখেন। বিশেষ কোনও বক্তব্য নেই। শুধু ভাতের ফ্যান ফেলতে গেলে চেয়ে নিয়ে যান। নিয়ে গিয়ে গরুকে খাইয়ে দেন। ক্যান্টিনের কর্মী মুকুল মাহাতো বলেন, ‘‘নিজের জন্য কোনও খাবার চাইতেন না। তবে চোখমুখ দেখে আমরা বুঝতে পারতাম, পেটে কিছু পড়েনি। যা পারি দিতাম।’’

এ ভাবেই চলছিল। কত ভবঘুরেই তো রোজ দেখেন তাঁরা!

এক দিন ক্যান্টিনের কর্মীরা দেখেন, প্রৌঢ়ার পা-টা ফোলা। খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। কী হয়েছে? বলতে পারেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। ক্যান্টিনের কর্মীরাই হাসপাতালে নিয়ে যান।

ওষুধ খেয়ে পায়ের ব্যথা কমে। এ বারে ময়লা কাপড় বদলে নতুন শাড়ি হয়। স্নান করিয়ে দেন ক্যান্টিনের মহিলা কর্মীরা। রাতে যাঁরা ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকতেন, সেখানে একটা কোণে শোয়ার বন্দোবস্ত করে দিতেন। অনেকবার অনেকেই জানতে চেয়েছেন, নাম কী? বাড়ি কোথায়?

সেই ফেসবুক পোস্ট।

উত্তরে যা বলতেন, তার থেকে একটাই কথা বোঝা যেত। বীরভূম। কিন্তু খড়ের গাদায় কি সুচ খোঁজা চলে!

ফলে সে ভাবেই চলে যেতে পারত। কত ভবঘুরেই তো রোজ দেখা যায় রাস্তাঘাটে।

কিন্তু মুকুলবাবু শুক্রবার প্রৌঢ়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। অনেকে শেয়ার করেন সেটা। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যায় বাসন্তীর পরিজনদের কাছেও। সে দিনই একটা ফোন আসে। নাম, ঠিকানা, পরিচয় সব জানা যায়। বলা হয়, পরিজনেরা বাসন্তীকে নিতে আসছেন। তাঁরা যেন আরও কিছুক্ষণ একটু লক্ষ রাখেন।

শনিবার রাতেই নারায়ণপুর গ্রাম থেকে বাসন্তীর দাদা অনন্ত সাহা পুরুলিয়া পৌঁছন। দাদাকে দেখেই কেঁদে ফেলেন বাসন্তী। ক্যান্টিনের লোকজন পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, সব খতিয়ে দেখে ওই মহিলাকে বাড়ি লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অনন্ত বলেন, ‘‘বোন অনেকদিনই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুক্রবার আমাদের পরিচিত একজন ফেসবুকে ওর ছবি দেখে খবর দেয়।’’

বাবা বৈদ্যনাথ সাহা জানান, বাসন্তীর বিয়ের কিছু দিন পরেই স্বামীকে হারান। একমাত্র ছেলেও বাড়ি ছাড়ে পরে। তার পরেই মানসিক ভারসাম্য হারান ওই প্রৌঢ়া।

তিনিও বাড়ি ছেড়েছিলেন। আবার ফিরেও গেলেন। জেনে গেলেন, ঘরের বাইরেও রয়েছে অনেক আপনজন।

Facebook post Missing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy