Advertisement
১৯ মে ২০২৪
বাঁকুড়া মেডিক্যাল

যন্ত্র বিগড়ে বন্ধ থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়

সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো জরুরি। থ্যালাসেমিয়া নির্মূল করতে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অফিস-কাছারির দেওয়ালে বড় বড় হরফে লিখে সরকার মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৭
Share: Save:

সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো জরুরি। থ্যালাসেমিয়া নির্মূল করতে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অফিস-কাছারির দেওয়ালে বড় বড় হরফে লিখে সরকার মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু জেলায় থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর একমাত্র সরকারি ঠিকানা সেই বাঁকুড়া মেডিক্যালেই এক বছরেরও বেশি সময় থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে! কারণ মেশিন খারাপ। অভিযোগ, বাঁকুড়া মেডিক্যালের তরফে বারবার মেশিন ঠিক করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। সম্প্রতি যদি নতুন মেশিন এসেছে, কিট আসেনি। ফলে অবস্থা রয়ে গিয়েছে একই রকম।

স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, দম্পতির কোনও একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা প্রবল। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, লাগাতার প্রচারে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতন মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় পরীক্ষার জন্য তাই প্রায়ই পুরুষ-মহিলা হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

এই জেলায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। কেবলমাত্র বাঁকুড়া মেডিক্যালেই প্রতি মাসে প্রায় ৩৭৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্ত নিতে আসেন। এই রোগীদের জন্য মাসে গড়পড়তা ৬০০- ৮০০ ইউনিট রক্ত লাগে। এক চিকিৎসকের মন্তব্য, সমাজের সর্বস্তরে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতাই এই রোগ নির্মূল করতে পারে।

তবে বাঁকুড়া মেডিক্যালে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করানোর ‘হাই পারফরমেন্স লিক্যুইড ক্রোমোটোগ্রাফি’ (এইচপিএলসি) মেশিনটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তাতে সমস্যা শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেশিনটি দ্রুত সারানো অথবা নতুন মেশিন বসানোর জন্য রাজ্য থ্যালাসেমিয়া দফতরে একাধিকবার তদ্বির করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। থ্যালাসেমিয়া দফতরের তরফে সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে তাই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা না হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন পরীক্ষা করাতে আগ্রহীরা। এই পরীক্ষা বেসরকারি স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে করাতে গেলে খরচ পড়ে কমবেশি এক হাজার টাকা। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় নানা কর্মসূচি নেয় বেশ কিছু সংস্থা। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ওই কর্মসূচি মার খাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ওই সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা।

বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কাঞ্চন বিদ জানান, মাস খানেক আগে বড়জোড়া ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা জোড়শাল হাইস্কুলে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। শিক্ষকদের উদ্যোগে স্কুলের সমস্ত পড়ুয়াই থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরিবারের লোকজনদেরও এই পরীক্ষা করাতে রাজি করিয়েছিল। কাঞ্চনবাবুর কথায়, “ওই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে ইচ্ছুক হওয়ায় আমি বাঁকুড়া মেডিক্যালের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সাফ জানিয়ে দেয়, মেশিন ঠিক না হওয়ায় পর্যন্ত পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।” তাঁর আক্ষেপ, ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রায়ই তাঁকে ফোন করে জানতে চাইছেন হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় মেশিন কবে চালু হবে। কিন্তু সেই উত্তর হাসপাতাল থেকে আর পাওয়া যায়নি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খগপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের সমস্ত পড়ুয়া ও গ্রামের লোকজন থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে সচেতন হয়ে পরীক্ষা করাতে চেয়েছিলেন। যাঁরা ওই শিবির করলেন তাঁরাই বলেছিলেন হাসপাতাল থেকে টিম এসে রক্ত নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেবে। কিন্তু হল আর কই!’’

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “মেশিনটি আমরা কিনতে পারব না। থ্যালাসেমিয়া দফতর থেকেই সেটি নিতে হবে। আমরা থ্যালাসেমিয়া দফতরকে বহুবার জানিয়েছি দ্রুত নতুন মেশিন দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও মেশিন পাইনি।” বাঁকুড়া মেডিক্যালের থ্যালাসেমিয়া ইনচার্জ তথা বাঁকুড়া মেডিক্যালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান গৌতমনারায়ণ সরকার জানান, ওই মেশিন পাওয়ার জন্য তিনি কলকাতার আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, “নতুন মেশিন এসেছে। কিট এলেই রক্ত পরীক্ষা চালু করে দেওয়া হবে। তার জন্য আমরা যা করার করছি।” কিন্তু ততদিনে আগ্রহীদের রক্ত পরীক্ষার আগ্রহ থাকবে তো? সংশয় কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thalassemia medical instruments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE