E-Paper

‘পরিকল্পনা’ করেই খুন, সুচিত্রার মায়ের দাবি

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রথমে এই বিয়েতে সায় ছিল না দুই পরিবারেরই। কিন্তু, নাছোড় সুচিত্রা পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মাঝামাঝি বিয়ে হয়ে গেলেও দম্পতির মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই ছিল বলে সুচিত্রার পরিবারের দাবি।

পাপাই বাগদি

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৮
নিহত সুচিত্রার মা সরস্বতী বাগদি-সহ পরিবারের শোকার্ত সদস্যেরা। বুধবার মহম্মদবাজারের সেকেড্ডার দ্বারকোটা গোলারপাড়ায়।

নিহত সুচিত্রার মা সরস্বতী বাগদি-সহ পরিবারের শোকার্ত সদস্যেরা। বুধবার মহম্মদবাজারের সেকেড্ডার দ্বারকোটা গোলারপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

মহম্মদবাজার থানার হিংলো গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ দাসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেকেড্ডা পঞ্চায়েতের দ্বারকোটা গোলারপাড়ায় সুচিত্রা বাগদির। সেই প্রেম পরিণতি পায় গত বছর, দু’জনের বিয়ে দিয়ে। কিন্তু, বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই সুচিত্রাকে এ ভাবে খুন হতে হবে, তা ভাবেননি তাঁর বাবা-মা ও আত্মীয়-পরিজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রথমে এই বিয়েতে সায় ছিল না দুই পরিবারেরই। কিন্তু, নাছোড় সুচিত্রা পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মাঝামাঝি বিয়ে হয়ে গেলেও দম্পতির মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই ছিল বলে সুচিত্রার পরিবারের দাবি। সেই কারণে একাধিকবার বাপের বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন ওই তরুণী। পরে ফের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছেন। এ বারেও দিন চারেক বাপের বাড়িতে থাকার পরে, মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পথে খুন হয়ে গেলেন কুড়ি বছরের ওই তরুণী।

দম্পতির অশান্তির কথা জানিয়েছেন নিহত বধূর মা সরস্বতী বাগদিও। বুধবার গ্রামের বাড়িতে বসে শোকার্ত মায়ের অভিযোগ, ‘‘ওদের মধ্যে অশান্তি হচ্ছিল। শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত হতে হচ্ছিল মেয়েকে। জোর করে বিয়ে করেছিল। তাই পরিকল্পিত ভাবে মেয়েকে খুন করা হল।’’ সরস্বতী জানান, মঙ্গলবার সাড়ে চারটে নাগাদ ডাক্তার দেখানোর নাম করে সুচিত্রাকে তাঁদের ওখান থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সন্দীপ। পরে সন্দীপের এক পরিচিতের থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারেন, মেয়ে আর নেই!

প্রতিবেশী কাজী হুমায়ূন কবির বলেন, "আমরা মঙ্গলবার রাতে খবর পাই সন্দীপ ও সুচিত্রা বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের হাতে পড়ে আহত হয়েছে। পরে শুনি সুচিত্রা মৃত। ওরা চার দিন ধরে এখানেই ছিল। আমরা যত দূর জানি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওদের পরিচয় হয়েছিল। তার পরে সন্দীপ বিয়ে করতে চাইছিল না।’’ তাঁর দাবি, তাঁরাও শুনেছেন, শ্বশুরবাড়িতে সুচিত্রাকে মারধর করা হত। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটা (সন্দীপ) ছিনতাইয়ের কথা বলছে। কিন্তু, কোনও কিছুই ছিনতাই হয়নি। অথচ সুচিত্রা খুন হয়ে গেল! এখানেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।"

সেকেড্ডা পঞ্চায়েতের ওই এলাকার সদস্য মীর আশরফ আলি বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পাওয়া থেকে আমি পরিবারের পাশে রয়েছি। এ দিন হাসপাতালেও গিয়েছিলাম। আমাদের যতদূর ধারণা, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ উপযুক্ত তদন্ত করুক। তাহলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।’’

‘ছিনতাইকারীরা’ তাঁকেও মারধর করেছে বলে দাবি করেছেন সন্দীপ নিজে। তিনি এখন সিউড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিন তাঁর মা শৈবা দাস সন্দীপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা বৌমাকে মেনে নিয়েছিলাম। কোনও অত্যাচার করা হয়নি। টুকটাক ঝামেলা সাংসারিক জীবনে হতেই পারে। এর বেশি কিছু নয়।’’ শৈবা ‘সামান্য অশান্তি’র কথা বললেও হিংলো গ্রামেই, তাঁদের প্রতিবেশীদের একাংশ জানাচ্ছেন, চরম অশান্তি ছিল ওই পরিবারে। একাধিক বার দু’পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Murder Case Mysterious death Birbhum

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy