Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Maoist

‘মাওবাদী’ দাবি করে চাকরি চেয়ে সরব

এ দিনের বৈঠকে ছিলেন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’র অন্যতম মুখ তথা বর্তমানে তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি অঘোর হেমব্রম।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বরাবাজার শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৬
Share: Save:

মাওবাদী নাশকতায় অভিযুক্ত হয়ে জেল খেটেছেন বলে কারও দাবি। কারও দাবি, মাওবাদী ‘লিঙ্কম্যান’-এর তকমা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে, স্কোয়াডের নেতারা সরকারি চাকরি পেলেও তাঁরা তেমন কিছুই পাননি। সোমবার পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার বেড়াদা গ্রামের একটি বৈঠকে এমন কিছু লোকজন চাকরি বা সরকারি ‘প্যাকেজ’ চেয়ে সরব হলেন।

এ দিনের বৈঠকে ছিলেন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’র অন্যতম মুখ তথা বর্তমানে তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি অঘোর হেমব্রম। তিনি বলেন, ‘‘লিঙ্কম্যান হিসেবে যাঁদের মাওবাদী তকমা দিয়ে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছিল, যাঁরা আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁদেরই এ দিন ডাকা হয়েছে। এ দিনের জমায়েতের উদ্দেশ্য ছিল, আবার দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) রাজ্যের ক্ষমতায় রাখতে হবে।’’ অঘোরবাবুর দাবি, সাবেক ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’র সদস্যেরা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন।

নভেম্বরের শেষের গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ সপ্তাহ পালনের ডাক দিয়ে হিন্দি ও বাংলায় লেখা মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলেছিল বরাবাজার এবং পাশের বান্দোয়ান থানা এলাকায়। এ দিনের সভাটি হয় বরাবাজারের বেড়াদা গ্রামের বটতলায়। উপস্থিত লোকজন নিজেদের বরাবাজার, বলরামপুর, বান্দোয়ান, আড়শা, বাঘমুণ্ডি-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানা এলাকার বাসিন্দা বলে দাবি করেন।

অযোধ্যাপাহাড়ের একটি গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক বলেন, ‘‘পাহাড়ে আমাদের গ্রামটির অবস্থান আড়শা, বাঘমুণ্ডি ও বলরামপুর থানার সংযোগস্থলে। এক সময়ে এলাকাটি মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল। রাতে কোথায় পোস্টার সাঁটতে হবে, কখন ডেরা বদলাতে হবে, কবে মিছিল করতে হবে, বাড়ি থেকে স্কোয়াডের সদস্যদের খাবার পাঠানো হবে কী ভাবে— সব দেখেছি। স্কোয়াডের নেতারা চাকরি পেয়ে গেলেন। আর আমরা পড়ে রইলাম খুবই খারাপ অবস্থায়।’’

অঘোরবাবু অবশ্য বৈঠকে বলেন, ‘‘মাওবাদী তকমা দিয়ে যাঁদের জেল খাটানো হয়েছিল, তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চিন্তাভাবনা করেছেন। জঙ্গলমহলে এখন পিঁপড়ের ডিম খেয়ে থাকতে হয় না। দু’টাকা কিলো চালের ব্যবস্থা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন মানুষ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেকের চাকরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘোষণা করেছেন, বাকিরাও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তার জন্য় কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ বিভ্রান্ত করতে চাইলে বিভ্রান্ত হবেন না।’’

কয়েকমাস আগে খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, মাওবাদী সংস্রব থাকা লোকজন এবং মাওবাদী হামলায় নিখোঁজদের পরিজনকে চাকরি দেওয়া হবে। তার পর থেকেই চাকরি চেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে দাবি উঠে এসেছে। আগেই পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে কিছু লোকজন নিজেদের পুরনো মাওবাদী বলে দাবি করে চাকরির দাবি তুলেছিলেন। এ বারে তাতে যুক্ত হল পুরুলিয়া।

বলরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘যাঁরা স্কোয়াডে ছিলেন, রাজ্য সরকারের ঘোষিত পুনর্বাসন প্যাকেজ মোতাবেক পালাবদলের পরে তাঁরা সেই সুবিধা পেয়েছেন। এত দিন গোটা বিষয়টি প্রশাসনিক ভাবে দেখা হয়েছে। এখনও সে ভাবেই দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist barabazar wants job
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE