আদালতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরে জেলমুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, সোমবার রাতে বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা পরিযায়ী শ্রমিক সোনালি বিবি-সহ ছ’জনকে ফের থানায় নিয়ে যায় বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ। উদ্বেগে ছিলেন পরিজন। তবে মঙ্গলবার দুপুরে সোনালিদের ছেড়ে দেওয়া হল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ এ দিন ফোনে জানান, সোনালিদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। বলেন, ‘‘ওঁরা অন্য দেশের নাগরিক। এখানে যাতে কেউ ওঁদের হয়রান বা ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য থানায় নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পূর্ণ বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ পাসপোর্টহীন সোনালিদের নিয়ে যাতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুর-এলাকার নয়াগোলা মহল্লার অস্থায়ী আস্তানায় ফিরে এ দিন সোনালি ও সুইটি বিবিরা বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলেন ভিডিয়ো-কলে। টানা ১০০ দিন পরে কুশল বিনিময়ের মাঝে সোনালিরা জানান, তাঁরা ভাল আছেন।
সোনালিদের বিষয়ে মানবিকতার খাতিরে কী করা যেতে পারে, সোমবার তা কেন্দ্রীয় সরকারকে দেখতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। ওই দিন দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সোনালিদের জামিন মঞ্জুর করে। বীরভূম থেকে বাংলাদেশে সোনালিদের সাহায্যের জন্য যাওয়া মফিজুল শেখ এজলাসে ছিলেন। সোনালিদের জামিনদার হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুর-এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন। তবে সোমবার রাতেই পুলিশ সোনালিদের ফের নিয়ে যায় থানায়।
মফিজুল জানান, এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসে সোনালিদের আইনজীবী শফিক এনায়েতুল্লা, জামিনদার ফারুক এবং স্থানীয় এক বাসিন্দা একটি মুচলেকায় সই করেন। তার পরেই সোনালিদের হস্তান্তর করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, আদালতের নির্দেশে ১০ দিন অন্তর পুলিশ সোনালিদের বিষয়ে আদালতকে রিপোর্ট করবে।
‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে গত ২০ অগস্ট সোনালি-সহ ছ’জনকে ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর মডেল থানার পুলিশ। সকলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে ছিলেন। উদ্বেগ ছিল সোনালির গর্ভাবস্থা নিয়ে। বাংলাদেশের আদালতে জামিন মেলার পরে, তাঁদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে ফারুকের বাড়ির কাছাকাছি ভাড়াবাড়িতে। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, আদালতের অর্ডার-কপি পৌঁছতে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ওঁদের পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল। ছেড়ে দিয়েছে।’’ সোনালিদের আর এক আইনজীবী এক্রামুল হক পিন্টু জানান, সোনালি যে কোনও সময় সন্তান প্রসব করতে পারেন। মঙ্গলবার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়াভাবে হয়নি। আজ, বুধবার তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
সোনালিদের ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিজেপিকে তোপ দেগে সামিরুল লিখেছেন, ‘নিরীহ, অসহায় মানুষের সঙ্গে বিজেপি সরকার কতটা অন্যায় করেছে, তা এই ঘটনা প্রমাণ করে। বাংলাদেশ আদালত তাদের রায়ে পরিষ্কার বলেছে, অন্তঃসত্ত্বা সোনালি-সহ ছ’জনকে জোর করে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার এবং বাংলা-বিরোধী জমিদারদের সঙ্গে লড়াই চলবে’।
আজ সোনালিদের নিয়ে বাংলাদেশ আদালত এবং এ দেশের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। কীহয়, সে দিকে তাকিয়ে সোনালি, সুইটিদের পরিবার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)