দিন কয়েক আগে, হঠাৎ বোলপুরের মকরমপুর উত্তনারায়ণপুর এলকার দুটি জঙ্গলে আগুন লেগে গিয়েছিল। প্রায় সমসাময়িক সময়ে আগুন লাগে দুবরাজপুরের মাজুরিয়া জঙ্গলেও। সময়মতো খবর পাওয়ায় ওই ঘটনাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি আটাকানো গিয়েছে। কিন্তু সব সময় যে তেমন সুযোগ পাবেন না বিলক্ষণ জানেন বনকর্তারা।
দফতরের চিন্তার কারণ এটাই।
জঙ্গলে আগুন ছড়ানো নিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এবং অসর্কতা থেকেই আগুন লাগছে। জনসচতনতা কী ভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বীরভূমের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার কল্যাণ রাই।
ওই বনকর্তা বলছেন, জঙ্গলে যাতে আগুন না লাগে সে জন্য কী করা উচিত এবং লাগলে কী করা উচিত সেই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে গত বছর থেকেই লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। এ বারও বিলি হচ্ছে লিফলেট। রয়েছে ফ্লেক্স। এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য ফায়ার লাইন (একটা স্পেস ছেড়ে রাখা) টেনে দেওয়া। এবং প্রতিটি বনসুরক্ষা কমিটিকে সচেতন করা। জঙ্গলে যাতে আগুন না লাগে সে জন্য কী করা উচিত সেগুলি জানানোই উদ্দেশ্য।
বলদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কারণ এই সময়ের আবহাওয়া শুষ্ক। এখন জঙ্গলে পড়ে রয়েছে অনেক শুকনো পাতা। তার উপরে ছোট্ট একটা আগুনের ফুলকি পড়লেই বাকি কাজটা করে দমকা হওয়া। একবার জঙ্গলে কোনও কারণে আগুন লাগলে তা নেভানো শক্ত। ফলে বিস্তর ক্ষতি হয়।
বনদফতর ও দমকলের বিভাগের দাবি, কেউ হয়তো অসতর্কভাবে সিগারেট বা বিড়ির জ্বলন্ত টুকরো জঙ্গলে ফেলে দিল। শুকনো পাতায় লেগে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কখনও আবার ইচ্ছে করে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, পরে মরা গাছগুলিকে কেটে বিক্রি করার ফন্দিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গরু চরাতে গিয়ে রাখাল ছেলেরাও মজা করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় জঙ্গল লাগোয়া শুকনো ঘাসে। এতে যে শুধু জঙ্গল পুড়বে তাই নয়, মারা পরবে পশু পাখি। এমনকী জনবসতি ঘেঁষা জঙ্গলে আগুন লাগলে সেই আগুন ছড়াতে পারে লোকালয়েও।
বনদফতরের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর দিতে অনুরোধ করেছেন জঙ্গলের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রান্তিক মানুষেরা। যাঁদের রুজি রুটির অনেকটা জঙ্গল কেন্দ্রিক।
দুবরাজপুরের বাবু মাল, রাজনগরের রামেশ্বর মুর্মু, খয়রাশোলের সুমিত্রা সরেনদের কথায়, গভীর জঙ্গলে আগুন সচরাচর লাগে না। লাগে রাস্তা বা বসতি লাগোয়া জঙ্গলে। তার অন্যতম কারণ আগের মতো জঙ্গল থেকে পাতা কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার লোক কমেছে। বিশেষ করে লোকালয় লাগোয়া জঙ্গলগুলির নিচে এত শুকনো পাতা ছড়িয়ে, সেখান বিড়ি বা সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো পড়লেই গেল।