Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Laxmi Puja

লক্ষ্মী প্রতিমার দাম চড়া, ভাটা বিক্রিতে

বরাবরই লক্ষ্মীপুজোর আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এ বার করোনা-কালে তা যেন অগ্নিমূল্য।

আরাধ্যা: পুরুলিয়া শহরের চকবাজারে বৃহস্পতিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

আরাধ্যা: পুরুলিয়া শহরের চকবাজারে বৃহস্পতিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৯
Share: Save:

লক্ষ্মীর আরাধনা করতে গিয়ে পুজোর উপচারের মূল্যবৃদ্ধিতে পকেটে টান পড়েছে গৃহস্থের। প্রতিমা থেকে চাঁদমালা, কদমা থেকে ভোগের আনাজপাতির দাম শুনে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার অনেকেরই গলদঘর্ম হল। তবে প্রতিমা খুব একটা বিকোয়নি বলে দাবি মৃৎশিল্পীদের।

বরাবরই লক্ষ্মীপুজোর আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এ বার করোনা-কালে তা যেন অগ্নিমূল্য। বড়জোড়ার পখন্না গ্রামের প্রতিমা শিল্পী পাপু সূত্রধর থেকে বিষ্ণুপুরের প্রতিমা শিল্পী সমীর দাস, কার্তিক পালেরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় মূর্তির দাম বেশ কয়েকশো টাকা করে বেড়েছে। না বাড়িয়ে তাঁদের উপায়ও নেই। কারণ, মূর্তি তৈরির উপকরণ খড়, রং, দড়ি— সব কিছুর দামই এ বার বেড়ে গিয়েছে। সে কারণে স্থানীয় শিল্পীরা অনেকে এ বার ছাঁচের মূর্তি তৈরি না করে বর্ধমান থেকে আনিয়ে বিক্রি করছেন।

আবার বাঁকুড়ার পোদ্দারপাড়ার শিল্পী শ্যামসুন্দর চঁদ দাবি করছেন, ‘‘এ বার প্রতিমা কেনার চাহিদা অনেক কম। সে কারণে দাম কমিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’’ তিনি জানান, গত বছরে তিনি চার ফুটের প্রতিমা তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে ভাল লাভ করছেন। কিন্তু এ বার খদ্দের ধরে রাখতে ওই আয়তনের প্রতিমা আড়াই হাজার থেকে দু’হাজারেও তাঁকে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পুরুলিয়া জেলায় লক্ষ্মী পুজোর চল তুলনায় কম। এ বার করোনা পরিস্থিতিতে লক্ষ্মী প্রতিমার বিক্রি আরও কম বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। তাঁদের দাবি, উপকরণের দাম বাড়লেও প্রতিমার দাম গড়ে গত বছরের তুলনায় ৫০-১০০ টাকার বেশি বাড়াননি।

তাতেও প্রতিমার বিক্রি বিশেষ নেই বলে আক্ষেপ পুরুলিয়ার রথতলার মৃৎশিল্পী ফকির পালের। তিনি বলেন, ‘‘বরাবরই প্রতিমার বরাত আগাম দিয়ে যান ক্রেতারা। এ বার এক জনও বরাত দেননি।” ঝালদার তুলিন এলাকার প্রবীণ শিল্পী কালীচরণ সূত্রধর জানাচ্ছেন, গত বার ১৭টি মূর্তি বিক্রি করেছিলেন। এ বার বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ছ’টি। রঘুনাথপুর শহরের মূর্তি বিক্রেতা জীবনকৃষ্ণ কর বাইরের জেলা থেকে বিভিন্ন মাপের মূর্তি এনে বিক্রি করেন। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার প্রথম থেকেই মূর্তি বিক্রিতে মন্দা।’’

দাম বেড়েছে চাঁদমালা থেকে কদমা, পদ্ম ফুলেরও। বিষ্ণুপুরের দশকর্মার দোকানদার বাবাই পাল বলেন, ‘‘গতবারের ৮০ টাকার চাঁদমালা, এ বার ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজার খুব খারাপ।’’ বড়জোড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী আশিস সেন জানান, কদমার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু স্থানীয় ভাবে বরাত কম বলে বাইরে থেকে তাঁকে আনাতে হয়েছে। পুরুলিয়ায় মূর্তির ডাকের সাজ থেকে শুরু করে চাঁদমালার দাম কমিয়েও তেমন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। রঘুনাথপুরের ডাক সাজের শিল্পী কার্তিক রেওয়ানি জানাচ্ছেন, ১০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দামের দেড়শো চাঁদমালা তৈরি করেছেন। এ দিন বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০টি।

ভোগের খিচুড়ির ফুলকপি, আলু-সহ নানা আনাজের দর অনেক দিন ধরেই বেড়ে রয়েছে। খাতড়া ঢালাই রোডের বধূ লক্ষ্মী দে চৌধুরী, বাঁকুড়া শহরের গীতা চৌধুরী, অপর্ণা করেরা বলছেন, ‘‘এ বার আর ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো করা যাচ্ছে না। কাটছাঁট করেই আরাধনা করব।’’ পুরুলিয়া শহরের শম্পা গুপ্ত, রঘুনাথপুরের শুক্লা মিশ্র, ঝালদার অনিমেষ চন্দ্র জানাচ্ছেন, বাড়ির পুজো। তাই সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই তাঁরা বাজার করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laxmi Puja Idol high price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE