Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব, অচল সেরা পঞ্চায়েত

এক বার নয়। পর পর দু’বছর এই পঞ্চায়েতই পেয়েছে বীরভূমের সেরার শিরোপা। কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কারও। বিগত কয়েক মাস ধরে সেই পঞ্চায়েতেরই যাবতীয় উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে! অভিযোগ, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠই পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতে পারছেন না। আর তারই জেরে জেলার সেরা পঞ্চায়েতের কাজ লাটে উঠেছে।

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০২:১৪

এক বার নয়। পর পর দু’বছর এই পঞ্চায়েতই পেয়েছে বীরভূমের সেরার শিরোপা। কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কারও। বিগত কয়েক মাস ধরে সেই পঞ্চায়েতেরই যাবতীয় উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে!

অভিযোগ, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠই পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতে পারছেন না। আর তারই জেরে জেলার সেরা পঞ্চায়েতের কাজ লাটে উঠেছে। পরিস্থিতি এমনই এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ করতে পারেনি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। এমনকী, মুখ খুলতে নারাজ স্বয়ং প্রধানই। তবে, পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুবরাজপুরের বিডিও সুশান্তকুমার বালাও। তাঁর দাবি, সমস্যার সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিও তিনি আকর্ষণ করেছেন।

পঞ্চায়েত খবর, মাস কয়েক আগে ওই পঞ্চায়েতের অফিসের তালা ভেঙে ৮০টি ফুটবল এবং প্রচুর পরিমাণে ত্রিপল-সহ আরও কিছু জিনিসপত্র দুষ্কৃতীরা চুরি করে। পঞ্চায়েত প্রধান শিউলি ডোম দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই প্রধান-সহ বেশির ভাগ সদস্যই পঞ্চায়েত অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেন বলে খবর।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে প্রতি মাসে পঞ্চায়েতে সাধারণ সভা বসার নিয়ম। সেই সভায় পঞ্চায়েতের যাবতীয় পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে লিপিবদ্ধ হয়। এবং ব্লকে পাঠানো হয়। কিন্তু, সেই সভা গত কয়েক মাস হয়নি। ফলে পঞ্চায়েতের ১৪টি সংসদের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার নতুন কোনও আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না। ফিরে যেতে হচ্ছে রেসিডেনশিয়াল সার্টিফিকেট চাইতে আসা এলাকাবাসীকেও। এ দিকে, পঞ্চায়েত এলাকায় ৩২৫টি নলকূপের বেশ কয়েকটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কিছু নলকূপ সংসদের বাসিন্দারা চাঁদা তুলে মেরামত করেছেন। বহু রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদুমার এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘সাম্প্রতিক ঝড়-জলে বেশ কিছু গরিব মানুষের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পঞ্চায়েতের অচলাবস্থার জন্য সময়ে ত্রাণ পেতে তাঁদের বহু বেগ পেতে হয়েছে।’’ এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ না পেলেও পঞ্চায়েতের এই অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ব্লক প্রশাসন। এক কর্তা বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে ওই পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের মিটিংয়ে কেউ যোগ দিতে আসেননি। কেন আসছেন না জানার জন্য প্রধানকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। যার উত্তর আসেনি। এই অচলাবস্থার জন্য ওই পঞ্চায়েতের সোশ্যাল অডিটও করা সম্ভব হয়নি।’’

এমন ঘোরতর অচলাবস্থার পরেও কেউ কেনও কোনও অভিযোগ করেননি। অচলাবস্থার কারণই বা কী? তৃণমূলের প্রধান শিউলি ডোমকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি আর কথা বলতে চাননি। পরে ফোন করা হলে এক পুরুষকণ্ঠ বলেন, ‘‘প্রধান কারও সঙ্গেই কোনও কথা বলছেন না। দয়া করে ওঁকে আর বিরক্ত করবেন না।’’ মুখে কুলুপ এঁটেছেন গ্রামবাসীও। পদুমার ওই বাসিন্দা দাবি করেন, ‘‘আমাদের মুখ খোলা বারণ। প্রতিবাদ করে জীবন খোয়াব নাকি!’’

কেন?

তৃণমূল সূত্রের খবর, এর পিছনে রয়েছে এলাকায় দলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব। মজার বিষয় হল, দুই গোষ্ঠীই আবার দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী। এক গোষ্ঠীর নেতা দলের দুবরাজপুর ব্লকের সভাপতি ভোলা মিত্র। আর এক গোষ্ঠীর নেতা অঞ্চল সভাপতি শেখ গিয়াসউদ্দিন। ঘটনা হল, পঞ্চায়েত ভোটের বহু আগে থেকেই ওই এলাকার দখল চলে গিয়েছিল গিয়াসউদ্দিন গোষ্ঠীর হাতে। পঞ্চায়েত ভোটে কোনও বিরোধী দলই সেখানে প্রার্থী দিতে পারেনি। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদে ভোটাভুটি হয়েছিল তৃণমূলেরই জয়ী সদস্যদের মধ্যে। এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ভোটাভুটিতে গিয়াসের স্ত্রী শামিমা বেগমকে ১৩-১১ ভোটে হারতে হয়। সভাপতি হন ভোলা-গোষ্ঠীর তনুশ্রী ঘোষ। ওই গোষ্ঠীর দুই কর্মাধ্যক্ষ আবুল কালাম এবং শেখ আলিমের দাপটে জমি হারাতে শুরু করে গিয়াস-গোষ্ঠী।’’

কিন্তু, গত বছর দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী খুন হওয়ার পরে ফেরার হয়ে যান আলিম। এবং মাস ছ’য়েক আগেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়ে যান কালাম। আর তার পর থেকেই পদুমা এলাকায় ফের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করা শুরু করে গিয়াসউদ্দিন গোষ্ঠী। আর তার পর থেকেই পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকছেন না ভোলা মিত্রের অনুগামী বলে পরিচিত ওই পঞ্চায়েতের প্রধান এবং আরও সদস্যেরা। এলাকার উন্নয়নের কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েও গিয়াসউদ্দিন দাবি করেন, ‘‘কিছু সিপিএম-কংগ্রেসের লোক আমাদের দলে যোগ দিয়ে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে।’’

এলাকায় উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ বলে মেনে নিয়েছেন ভোলাবাবুও। তবে, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কথা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’

Suri Group clash Trinamool Dubrajpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy