জখম তৃণমূল কর্মী।
একশো দিনের কাজেও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর তা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল দুই বিবাদমান গোষ্ঠী।
সোমবার সকালে ইলামবাজার থানার বিলাতি পঞ্চায়েতের গোলটিকুরী গ্রামের ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের আট জন আহত হয়েছেন। ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পাঁচ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন জনের চোট গুরুতর হওয়ায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় টহলদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। তবে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। ইলামবাজারের বিডিও উৎপল পাতসা এ দিন বলেন, ‘‘ওই এলাকায় একশো কাজ শুরুর কথা ছিল আজ। কিন্তু, একদল বাসিন্দার বাধায় কাজ শুরু করা যায়নি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সোমবার গোলটিকুরী গ্রামের নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে কাজকে ঘিরে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ নিয়ামত এবং তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী শেখ নাজির মধ্যে বিবাদ বাঁধে বলে অভিযোগ দু’পক্ষে কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি, রড নিয়ে মারামারি শুরু করে। তাতেই আহত হন দু’পক্ষের আট জন। ওই ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করতে গিয়ে গ্রামেরই বাসিন্দা, পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার আনারকলি খাতুন হেনস্থার মুখে পড়েন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। ঘটনার পর থেতে তিনি অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
গ্রামে তৃণমূলের মিছিল।
ঘটনার পরে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ নাজিরের সঙ্গে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই নিকাশি নালা সংস্কারের কাজটি আমাদের করার কথা ছিল। কিন্তু, সোমবার শেখ নিয়ামতের লোক জন ওই কাজ শুরু করেন। কেন এমন করছে জানতে চাওয়ায় ওঁরা উত্তেজিত হয়ে আমাদের লোকজনদের মারধর করে।’’ তাঁর দাবি, ঘটনায় তাঁদের দু’জন আহত হয়েছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছেও। নাজিরের ওই বয়ানকে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের বিলাতি অঞ্চল সভাপতি শেখ নিয়ামত। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমরা ওই এলাকায় কাজ শুরু করেছিলাম। শেখ নাজিরের নেতৃত্বে এক দল বহিরাগত এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদ করায় ওরাই মারমুখি হয়ে আমাদের আক্রমণ করে। তাতে আমাদের ছ’জন আহত হয়।’’ তাঁরাও পুলিশকে ঘটনার কথা জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজ নিয়ে শাসকদলের ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের আশঙ্কা ছিলই। আর সেই আশঙ্কা আঁচ করে দিন দু’য়েক ইলামবাজারের দলীয় কার্যালয়ে আগে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম সকলকে নিয়ে একটি বৈঠকও করেন। এ দিনের মারামারিতে জড়িয়ে পড়া দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাতেও শেষরক্ষা হল না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপি-র অন্যতম জেলা সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সিংহের দাবি, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কত সভা-বৈঠক ওরা করছে। ফলাও করে বিজেপি থেকে দলে দলে লোক তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে বলে প্রচারও করছে। কিন্তু, নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই থামাতে পারছে না। ওরা আসলে এলাকায় অশান্তি জিইয়ে রাখতে চায়।’’
যথারীতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বকে উড়িয়েই দিয়েছেন জাফারুল। তাঁর নিজের ব্যাখ্যা, ‘‘এটা গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নয়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জেরে একটা সমস্যা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সকলকে দলীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে। তৃণমূল প্রধান চাঁদমণি মাহালির দাবি, এ দিন ঘটনাস্থলে পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার গিয়ে কাজ শুরু করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বাধাতেই ওই কাজ শুরু করা যায়নি।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy