স্কুলের পাশের নিকাশি নালা বুজে গিয়েছে কবেই। তাই জমিয়ে বর্ষা এলেই চারপাশের জল নেমে এসে স্কুলে জমে যায়। আর তাতেই স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বেজে যায়।
ফি বছরের সেই রুটিন এ বারও বদলাল না সুরুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের। শুক্রবারও বাধ্য হয়ে ছুটি দেওয়া হল পড়ুয়াদের।
প্রত্যেক বছর বর্ষায় ভারী বৃষ্টি নামলেই বোলপুর-সিউড়ি ও ইলামবাজার রাস্তার (এন এইচ টু বি) পাশের এই স্কুলে জল ঢুকে যায়। এমনকী বছরের যে কোনও সময় নাগাড়ে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেও জল থইথই স্কুল চত্বরে। ক্লাস রুম থেকে অফিস রুম ও মিড-ডে মিলের রান্নার জায়গা এবং পড়ুয়াদের খাওয়ার জায়গাতেও জল জমে। তখন উপায় না থাকায় কর্তৃপক্ষ স্কুলে ছুটি দিয়ে দেন। শুধু সে দিনই নয়, এর জের থাকে পরের দিনও। জল নেমে যাওয়ার পরে এলাকার নোংরা আবর্জনা ভেসে এসে স্কুল চত্বরে এবং ক্লাস রুমে জমে থাকে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্যও পরের দিন ছুটি দিতে হয়। স্কুলের এই দশা ঘোচাতে ফি বছরের মতো এই বারও আগাম আর্জি জানানো হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সব মহলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই যে হয়নি, তা এ দিন পরিষ্কার হয়ে গেল।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে ১৬১ জন পড়ুয়া রয়েছে। আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার মরসুমে বেশ কিছু দিন স্কুলে জল জমে থাকায় ছুটি দিতে হয়। ফি বছর, এই স্কুলের পড়ুয়াদের এই অসুবিধার কথা সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানিয়েও, কোনও সুরাহা হয়নি। বরং দিন দিন সমস্যা বেড়েছে। অন্যান্য বছর জল জমার দিন স্কুলে ছুটি দেওয়া হলেও, গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার পরের দিনও স্কুল চত্বর এবং ক্লাসঘর ও অফিস ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এমন নোংরা ও আবর্জনা জমে থাকছে ওই চত্বরে।
অভিভাবকেরা জানান, স্কুলের পিছন দিকে এলাকার জল গড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিকাশি নালা রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ ওই নিকাশি নালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায়, জল উপচে স্কুলে ঢুকছে। সেই সঙ্গে জলে স্কুলে ভেসে আসছে লাগোয়া মাছ, মাংস, শাক-সব্জি বাজারের বর্জ্য ও এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির আবর্জনাও। ফলে দুর্গন্ধের ঠেলায় স্কুলের পঠন পাঠনের ওই পরিবেশ আরও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি বলে বাসিন্দাদের দাবি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শোভা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তী বলেন, “২০১১ সাল থেকে বারবার একই সমস্যার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব স্তরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সমস্যা যে জায়গায় ছিল, সেখানেই দাঁড়িয়ে। বরং দিনকে দিন আরও সমস্যা বাড়ছে। বৃষ্টি হলেই স্কুলে জল জমছে। আর বাধ্য হয়ে স্কুল ছুটি দিতে হচ্ছে।” শোভাদেবীর প্রশ্ন, হাঁটু জলে আর যাই হোক কচিকাঁচাদের কী পঠন-পাঠন হয়? তাঁর সংযোজন, ওই জলের মধ্যে বড়রা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থেকে স্কুলের সময়টা কাটিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু চার বছর, পাঁচ বছরের বাচ্চাদের ওই অবস্থায় থাকলে শরীর খারাপ করবেই। তাই বাধ্য হয়ে ছুটি দিতে হয়। অভিভাবকদের মধ্যে সব্যসাচী রায় বলেন, “বছরের পর বছর এই সমস্যা কেন চলবে? প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের কবে টনক নড়বে? ভেবে পাচ্ছি না।”
সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি বীরভূমে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ। তিনি বলেন, “সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান হয়, তার জন্য বোলপুর-শ্রীনিকেতন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় বিদ্যালয় পরিদর্শককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” স্কুলের অভিভাবক,পড়ুয়া ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রশ্ন, এই বর্ষায় আদৌ কি ‘জল পড়লে স্কুল ছুটি’ সমস্যার সমাধান হবে, না কি ফি বছরের মতো আবার আবেদন জানানো হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy