Advertisement
E-Paper

পুজোর আনন্দ মাটি বৃষ্টিতে

মাসখানেক আগে থেকেই রাতে কার্যত ঘুম ছিল না ওদের। প্রতিদিনই মাকে জিজ্ঞাসা, ‘‘আর ক’দিন মা?’’ বগা পুজো নিয়ে ছেলেমেয়েদের উত্তর দিতে দিতেও বিরক্ত হতেন বাবা-মায়েরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
মনসা পুজো উপলক্ষে মেলা বসেছে ময়ূরেশ্বরের বান্দহা গ্রামে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মনসা পুজো উপলক্ষে মেলা বসেছে ময়ূরেশ্বরের বান্দহা গ্রামে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মাসখানেক আগে থেকেই রাতে কার্যত ঘুম ছিল না ওদের। প্রতিদিনই মাকে জিজ্ঞাসা, ‘‘আর ক’দিন মা?’’ বগা পুজো নিয়ে ছেলেমেয়েদের উত্তর দিতে দিতেও বিরক্ত হতেন বাবা-মায়েরা। মঙ্গলবার সেই প্রতীক্ষার অবসান হলেও ছামনার সহেলি, রসুনপুরের প্রিয়ব্রতদের এখন আফশোস যাচ্ছে না— ‘‘আর কয়েক দিন পরে হলেই ভাল হতো।’’ তাদের আনন্দে বাদ সেধেছে বৃষ্টি। অন্যান্য বছর বগা উপলক্ষে কার্যত উৎসবের মেজাজ শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন গ্রামে। কিন্তু এ বার টানা বৃষ্টির জন্য অনেকেই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।

মনসা পুজোকেই স্থানীয় ভাষায় বগা পুজো বলা হয়। ওই পুজো থেকেই কার্যত দুর্গাপুজোর দিন গোনা শুরু হয়ে যায় এলাকায়। কারণ বগা পুজো মূলত এক দিনের হলেও সব মিলিয়ে তার রেশ কাটতে লেগে যায় চার দিন। আর সেই উপলক্ষে দুর্গাপুজোর মতোই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসেন। নতুন জামা কাপড় কেনা হয়। ভাল খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা হয়। কোথাও কোথাও মেলাও বসে।

প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, অধিকাংশ জায়গায় দু’দিন আগে মনসা মন্দিরে ঢুকে যান সেবাইত বা দেবাংশী। এ দিন দুপুরে তিনি মনসা নিয়ে মন্দির থেকে বের হন। তার পর মনসা মাথায় নিয়ে ভক্ত-সহ চলে গ্রাম প্রদক্ষিণ। পরের দিন পুজোর পরে সমাপ্তি হয় উৎসবের। স্বাভাবিক ভাবেই বগাপুজো ঘিরে তাই উৎসাহের অন্ত নেই গ্রামে গ্রামে। যদিও এ বারে সেই আনন্দে বাদ সেধেছে বৃষ্টি। ছামনার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, রসুনপুরের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অনন্ত মণ্ডলরা বলছে, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই ‘কবে বগা, কবে বগা’ জিজ্ঞাসা করে বাবা মাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, আর কয়েক দিন পরে হলেই ভাল হতো। বৃষ্টির জন্য সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। নতুন জামাপ্যান্ট আর পরাই হল না।’’

স্থানীয় বানদহ গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুজয় বাগদি, পূজা দাসদের আবার আকাশের মতোই মুখ ভার। তারা জানায়, প্রতি বারই বগা উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসে। তারা মেলায় জিনিস কেনার জন্য টাকাপয়সা জমিয়ে রাখে। কিন্তু এ বার বৃষ্টির জন্য দোকানপাট তেমন আসেইনি। মুখভার রসুনপুরের বধূ সঞ্চিতা পাল, অপ্সরী ভল্লাদেরও। তাঁরা বলেন, ‘‘বগা উপলক্ষে আমাদের গ্রামে প্রতিবার যাত্রাগান হয়। সেই যাত্রার আর্কষণে আত্মীয়স্বজনেরা আসেন। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। সোমবার যাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য সব ভণ্ডুল হয়ে যায়। কোথাই একটু আনন্দ করব তা নয়, বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলে দিল।’’

ওই যাত্রা গানের অন্যতম উদ্যোক্তা সামরিক কর্মী বিমল ভল্লা জানান, বিভিন্ন জায়গার শিল্পীদের নিয়ে মাসখানেক ধরে রির্হাসাল দিয়ে সোমবারে পালা মঞ্চস্থ করার কথা ছিল। সেই মতো মঞ্চ তৈরি হয়, মাইক, লাইট এমনকী শিল্পীরাও পৌঁছে যান। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আর পালা মঞ্চস্থ করা যায়নি। এ দিন মঞ্চস্থ হবে ভেবে সব আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে আবহাওয়ার গতিক দেখে সে পরিকল্পনাও শেষপর্যন্ত তাঁদের বাতিল করতে হয়েছে।

অন্য দিকে ছামনার প্রমোদ রায়, বানদহের সুনীল দাসরা বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রামেও সন্ধ্যায় মনসামঙ্গলের গান শুনতে মানুষজন মন্দিরে ভিড় জমান। এ বার বৃষ্টির জন্য কেউ বাড়ি থেকে বেরোতেই পারছে না। মন্দিরে যাবে কী করে? বগার আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল!’’

rainfall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy